মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

বলবো না

তখন সবে হাই স্কুলে পা দিয়েছি। শীতের মধ্যে সকাল সকাল লেপের নিচ থেকে উঠতে কি যে কষ্ট হতো। হাতমুখ ধোয়ার জন্যে পুকুরের সামনে দাঁড়াতেই মনে হতো ঝেড়ে একটা দৌড় দিয়ে আবার লেপের মধ্যে গিয়ে ঢুকি। অবশ্য মায়ের রুদ্রমূর্তিটা মনে পড়ত বলে তেমনটা করা হতো না কখনোই।
গরম ভাতের সাথে কোন দিন বর্তা, কোন দিন ভাঁজি অথবা ডাল এই দিয়ে খেয়েদেয়ে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়তাম স্কুলের জন্যে। ঈদগার কাছাকাছি এসে সবার সাথেই দেখা হতো। তারপর পাখির মত দল বেঁধে আনন্দগুলো ভাগাভাগি করে কাটিয়ে দিতাম সারাটা দিন। এটাই যেন নিয়ম হয়ে গিয়েছিল আমাদের। কিন্তু নিয়ম তো ভাঙার জন্যেই।

একদিন সকালের কথা। ঘুম ভাংতেই দেখি মা বাবার মাথার কাছে কপালে হাত দিয়ে বসে কাঁদছে। বাবা শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে কোকীয়ে উঠছে, ব্যথায়। তখন হাঁটুগুলো অনেকটা ভাজ করে উপরে নিয়ে আসছে, কুচকে ফেলছে চোখ, দু’হাত দিয়ে খামছে ধরছে পেট। আমি বুঝতে পারলাম ব্যথাটা পেটে।
ধীরে ধীরে বাবা কিছুটা শান্ত হয়ে এলো। মা উঠে গেল পাশের ঘরে। আমি পাশেই বসে ছিলাম। হঠাৎ বাবা বালিশ থেকে মাথাটা একটু তুলে বলল – ‘গায়ে কোথাও পচন ধরলে কেমন লাগে জানিস?’ আমি এমন প্রশ্ন কোনদিন শুনিনি। জিজ্ঞেস করলাম – ‘কেমন লাগে বাবা?’ বাবা ছলছল করা চোখ নিয়েও মুচকি হেসে বলল – ‘বলবো না’।

তার কিছুদিন পর, আমি তখন আর স্কুলে যাই না সারাদিন বাবার পাশেই বসে থাকি। বাবা সারাদিন শুয়ে থাকে, কখনো গলা দিয়ে গড়গড় শব্দ করে নিজেই জেগে উঠে কাশতে শুরু করে, মা পাশ থেকে গরম পানির গ্লাসটা এগিয়ে দেয়। আমি পাশে বসে থাকি। বাবাকে চামচ দিয়ে জাও খাইয়ে দেওয়া হয়, আমি পাশে বসে থাকি। নিয়মিত মানুষের আনাগোনা হয় বাড়িতে, আমি পাশে বসে থাকি। কখনো কখনো বাবা পেটটা খামছে ধরে চিৎকার করে ওঠে ব্যথায়, মা বাবাকে জাপতে ধরে মাথাটা বুকের কাছে নিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে, আমি কেঁদে উঠি।

একদিন বাড়িটা খুব বেশি নিরব হয়ে গেল। মা একটু পর পর ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে, সাথে কিছু নিকটাত্মীয়রাও। কেউ কেউ দোয়া পড়ছে। এত মানুষ তবুও বেশি আওয়াজ নেই বাড়িটায়। বাবা আজ চিৎকার করছে না, শুধু একটানা গুঙিয়ে চলেছে। গড়গড় আওয়াজ হচ্ছে গলা থেকে। একটু পর পর মুখের ভেতরটা রক্তে ভোরে উঠছে, যখন উপচে পড়ছে গাল বেয়ে তখন মুছিয়ে দিচ্ছে কেউ। আমি পাশে বসে আছি।
সেদিন সন্ধ্যায় যখন গ্রামটা নিয়মমাফিক নীরব হয়ে গেল, বাবার প্রিয় পূর্ণিমার চাঁদটা যখন তার সবটুকু আলো ঢেলে দিচ্ছিল আমাদের গ্রামে তখন কি হয়েছিল জানো?
বলবো না।

মানব ইতিহাসে ছাগলের অবদান!

ছাগল। মাংস, দুধ, চামড়া, বাচ্চা-কাচ্চা সর্বস্ব উজাড় করে দিয়ে উপকার করছে আমাদের। কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মানব ইতিহাসে এক বিশাল অবদান রেখেছে এই ছাগল!

৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ। কালদি নামের ইথিওপিয়ার এক ছাগল পালক, প্রতিদিনের মতো সেদিনও গিয়েছেন ছাগল চরাতে। ছাগলগুলোকে চরতে দিয়ে সে চলে গেছে আরাম করতে। দুপুরের দিকে ঘুমিয়েও পরেছিল একটু। বিকেলে জেগে উঠে আবার বাঁশিতে ফুঁ। এবারে সেই সুর, যা সে প্রতিদিনই বাজায় ছাগলের পালকে তাঁর কাছে ফিরিয়ে আনার জন্য। এই সুর শুনেই ছাগলগুলো তার কাছে ফিরে আসে এবং বাড়ির পথ ধরে। কিন্তু সেদিন ছাগলগুলো এলোনা। চিন্তিত হয়ে পড়ল কালদি। খুঁজতে শুরু করল।

একটুক্ষণ খুঁজেই পেয়েগেল ছাগলগুলো। কিন্তু সমস্যা হল, ব্যপক লাফালাফি শুরু করেছে ছাগলগুলো। দেখে বুঝারও উপায় নেই যে দিনভর এগুলো পুরো ভূমিতে চরেবেড়িয়েছে। আজ এদের যেন কোন ক্লান্তিই নেই! ব্যপারটা বুঝার চেষ্টা করল কালদি। খেয়াল করল, ছাগলগুলো ইথিওপিয়ার ঝোপ থেকে এক ধরণের ছোট ছোট লাল ফল খাচ্ছে আর তুমুল উৎসাহে লাফালাফি করে যাচ্ছে। কৌতূহলী হয়ে উঠলো কালদি। দু’তিনটা ফল হাতে তুলে নিল, ঘুড়িয়েফিরিয়ে দেখল। মুখে পুরে দিল। খেয়ে নিল। কিছুক্ষণের মধ্যেই ব্যপক চাঙ্গা হয়ে উঠলো কালদির শরীর। সে বুঝতে পারলো এটাই তাহলে ছাগলদের উৎসাহী হয়ে উঠার উৎস।

কিছু ফল সংগ্রহ করে ছাগলগুলো নিয়ে কালদি চলে এলো গ্রামে। গ্রামের লোকেদের ঘটনাটা বলল। তারপর সবাই মিলে ফলগুলোকে ফুটিয়ে পানিয় তৈরি করে পান করল। এবারে কাঁচা ফল খাওয়ার থেকেও বেশি উৎফুল্লতা অনুভব হল। ব্যস, শুরু হয়ে গেল কফি খাওয়া।

হ্যাঁ, এতক্ষণ কফি আবিষ্কারের ইতিহাসই বলছিলাম। আর সেই লাল ফলটা হচ্ছে কফি ফল। এই ইতিহাস এখনো ঘুরে বেড়ায় ইথিওপিয়ার মানুষের মুখে মুখে।

ভাবুন একবার, এক পাল ছাগল কিনা আবিষ্কার করে বসল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম বিক্রিত পণ্য যা বিশ্বের সর্বাপেক্ষা বেশি পানকৃত পানীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। ২০১০ সালে ৭ মিলিয়ন টন কফি উৎপাদিত হয়েছে সারা পৃথিবীতে। আর হ্যাঁ ভারত, ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়ায় কিন্তু আজও ছাগলরা কফি ফল খায়!

খানাপিনা

আপনি যদি নিজেকে সাধারণ ও সাভাবিক মানুষ বলে মনে করেন তবে আপনার জেনে রাখা উচিৎ যে, একজন মানুষ গড়ে তার সারা জীবনে ৬০,০০০ পাউন্ড খাবার খায় যা কিনা ছয়টা হাতির সারা জীবনের খাবারের সমান!
এতো গেল তথ্যের কথা এবার চলুন ঘটনায়। ঈশ্বরচন্দ্ৰ বিদ্যাসাগর ছিলেন অত্যন্ত ভোজন রসিক। তিনি যেমন খেতে ভালোবাসতেন তেমনি খাওয়াতে। মাঝেমধ্যেই তিনি তার বন্ধুদের রেঁধে খাওয়াতেন আর পরিবেশনের সময় ছড়া কাটতেন –
‘হুঁ হুঁ দেয়ং হাঁ হাঁ দেয়ং দেয়ঞ্চ করকম্পনে
শিরসি চালনে দেয়াং ন দেয়ং ব্যাঘ্ৰঝম্পনে ৷’
এহেন বিদ্যাসাগর একবার তার বন্ধুদের নিয়ে একটা সংগঠনই করে ফেললেন, নাম রাখলেন ‘ভোজনসভা’। এই সংগঠনের কাজ হচ্ছে চেনা পরিচিতদের বাড়িতে হঠাৎ হামলা করে খাওয়ার আবদার করে বসা। এই সংস্থার নাম ছড়িয়ে পড়েছিল ঘনিষ্ঠ মহলে। তাই প্রত্যেকেই সদা প্ৰস্তুত থাকতেন – এই বুঝি এল ভোজনসভার সভ্যারা!
একবার ঘটল এক কান্ড। ভোজনসভার সভ্যরা দল বেঁধে এক বন্ধুর বাড়িতে বেশ ঘটা করে খাওয়া দাওয়া করলেন। খাওয়া-দাওয়ার পরের দিন সংস্থার এক সদস্যের পেটের অসুখ হল। বেশ কয়েকদিন তার দেখা নেই। কিছুদিন পর সুস্থ হয়ে সদস্যটি এলেন ভোজনসভায়। বন্ধুরা তাঁকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাসা করতে লাগলেন । তার উদ্দেশ্যে সবাই বললেন, এ বড় পেট-রোগা! ভোজনসভার সভ্য হওয়ার উপযুক্ত নয়। একে সংস্থা থেকে বাদ দেওয়া উচিত।
এতক্ষণ চুপ ছিলেন বিদ্যাসাগ। হঠাৎ তিনি হাসতে হাসতে বললেন, ‘না হে না, তোমরা ঠিক বলছ না, ওই তো আমাদের মধ্যে একমাত্র সভ্য যে আদর্শের জন্য জীবন পর্যন্ত দিতে উদ্যত । ওকে ভোজনসভা থেকে কোনো মতেই বাদ দেওয়া যায় না।’
আরও একটা ঘটনা বলি, চারশ বছর আগের ঘটনা। রানি প্রথম এলিজাবেথ তার বাবুর্চিকে প্রথমবারের মত আলু দিয়ে তরকারি রান্নার হুকুম দিলেন। অথচ বাবুর্চি বেচারা জীবনে আলু চোখেই দেখেনি। যারফলে রান্নার সময় বাবুর্চি ভীষণ ঘাবড়ে গিয়ে আলুর গাছটা রেখে আলুকে আবর্জনা মনে করে ফেলে দিয়েছিল!
অনেক হল খাবার নিয়ে খচখচানি এবার কিছু তথ্য দিয়ে শেষ করব – জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (ফাও) এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলা দেশের সর্বাধুনিক খাদ্য নিরাপত্তা গবেষণাগারের পরীক্ষায় যানা গেছে – ‘বাংলাদেশের শতকরা ৪০ ভাগ খাদ্যপণ্যই ভেজাল!’
এদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলে এ রোগ বাড়ছে। প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
খাদ্যে ভেজাল মিশানোর অপরাধ হিসেবে ভারতে সাজা যাবজ্জীবন; চীনে মৃত্যুদণ্ড, পাকিস্তানে ২৫ বছরের কারাদণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রে সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নাই।
নতুন প্রণীত নিরাপদ খাদ্য আইন – ২০১৩ তে জরিমানা ও শাস্তির পরিমাণ বাড়িয়ে ৫ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রয়োগ খুবই কম চোখে পড়ে।

আঙুর ফল টক

অনেক দিন পরে সুবর্ণার সাথে দেখা। একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে। সাথে ওর স্বামী আর চার-পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা। মোটামুটি আগের মতই দেখতে এখনো। তবে শরীরটা কিছুটা ভারি হয়ে গেছে। খেয়াল করলাম হাঁটার সময় কেমন হাঁসের মত হেলেদুলে হাঁটছে। দেখতে খারাপ লাগছে না ব্যপারটা। কিন্তু ওর হাঁটা দেখলেই বারবার ‘দোল দোল দুলুনি’ গানটা মনে পড়ছে।
ওই প্রথম আমাকে দেখে ডাকল – ‘সুমন, এই সুমন’।
খালি পকেটে রাস্তায় বেরিয়ে দুশো টাকা কুড়িয়ে পেলে যেমন অদ্ভুত আনন্দ হয় ওকে দেখার পর আমারও সেরকম আনন্দ হল। ‘আরে তুমি এখানে’? চোখ-মুখে বিস্ময় নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
‘হু, কতদিন পরে দেখা তাই না’?
‘হ্যাঁ’…
অনেকক্ষণ চলল আমাদের কথা। আমাকে ওর স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আর বাচ্চাটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল মামা বলে। ভাবা যায়! অথচ এই সুবর্ণাকেই আমি একদিন কত চাইতাম মনে মনে।
ওর বাচ্চাটি বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। এক যায়গায় স্থির থাকতেই রাজি নয়। তাই ওর স্বামী হাঁটার জন্য বাচ্চাটিকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। আমরা দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। সুবর্ণার চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকাতে আমি ভাবলাম এবার আমার যাওয়া উচিৎ। কিন্তু হঠাৎ ওই নিরবতা ভাংল – ‘মনে আছে ভার্সিটিতে তুমি আমার কাছ থেকে বই ধাঁর নিয়ে পড়তে’?
‘বই না নোট। তুমি অযথাই বইগুলো দিয়ে পড়তে বলতে।’
‘তুমি কোনদিন পড়নি বইগুলো, তাইনা?’
‘স্বাভাবিক’, আমি বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করলাম। ‘নোট পড়লেই যেখানে ল্যাঠা চুকে যাচ্ছে বই পড়তে যাব কেন?’
‘না পড়ে যদি একবার খুলেও দেখতে বইগুলো তবে আমি হয়তো এই অনুষ্ঠানে তোমার সাথেই আসতাম’।
এরপর আমি আর বলার মত কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তেমন সুযোগও হয়নি অবশ্য। ওর স্বামী বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে এসেছিল। তাই ফর্মালি বিদায় নিয়ে নিলাম। আসতে আসতে নিজেকে সান্তনা দিচ্ছিলাম এই বলে যে – ‘বরাবরই আমার সাহসি মেয়ে পছন্দ, যে মেয়ে সাহস করে ভালোবাসার কথা বলতে পারে না তাকে বিয়ে না করে ভালোই হয়েছে; ও আসলে একটা কানারী (কাপুরুষের বিপরীত লিঙ্গ)’।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বউয়ের ফোন – ‘তুমি বিয়ে খেতে গেছ না করতে গেছ, আমি হাসপাতালে প্রেগন্যান্ট হয়ে পরে আছি আর সে রাসলীলা শুরু করেছে; আয় শুধু তুই একবার’।

বিবাহোত্তর কাব্য

শেষমেশ বিয়েটা করেই ফেলল ওরা, সেটাও দু’বছর আগের কথা। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক ছিল। সকল প্রেমই একটা পরিনতি চায় আর সেই পরিণতিটা হচ্ছে বিয়ে। কথায় আছে বিয়ে একশ কথা নিয়ে। ওদের বিয়েতেও তাই হয়েছিল। অনেকেই রাজি ছিলনা শুরুর দিকে। কিন্তু পাত্র-পাত্রী নিজেরাই যেহেতু উদ্যোগী হয়ে মাঠে নেমে পড়ল তাই নিমরাজি সদস্যদের আর করার কিছুই থাকল না। ভালোয় ভালোয় বিয়ের ব্যপারটা উতরেও গেল। এর মধ্যে দেখতে দেখতে দুটি বছরও কেটে গেছে।
সব ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু এদানিং পাত্রী মানে বর্তমানে যিনি স্ত্রী, তার বেশ অভিমান হতে দেখা যায়। তার অবশ্য বেশ জোড়াল কারণও আছে, বিয়ের আগে পাত্র মানে বর্তমানে যিনি বর, নিয়ম করে স্ত্রীর জন্যে কবিতা লিখত, সেগুলো আবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়েও দিত। প্রথম প্রপোজটাও কিন্তু কবিতা দিয়েই হয়েছিল। আমাদের গল্পের বর তার স্ত্রীকে লিখেছিল –
যদি অনুমতি দাও তবে কাছি আসি
বলতে চাই, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি…
আর আজকাল? কাব্য টাব্য সব শিকেয় উঠেছে। বরটি কিইবা করবে? এখন তো আর একা নয় যে প্রোমোশনের চিন্তা বাদ দিয়ে কোনরকমে চাকরীটা করবে আর সঙ্গিনীর জন্যে কবিতা লিখবে। এখন তাকে ভাবতে হয় ভবিষ্যতের কথা। তাই চাকরীটাও খুব সিরিয়াসলি করতে হয়। নিয়মিত বসকে তেল দিতে হয়। অন্য কলিগদের খুশী রাখতে হয়, যদিও ওদের টপকেই ওকে প্রোমোশন নিতে হবে! বাট কিছু করার নেই, এটাই লাইফ।
তো যাইহোক, এই অবস্থায় আর কবিতা কোথা থেকে আসে? তবুও স্ত্রীর বায়না বলে কথা। মেটাতে তো হবেই। তাই কথা দিল রাতে লিখে রাখবে, সকালে অফিসে যাওয়ার সময় কবিতা লেখা চিরকুটটা টেবিলে রেখে যাবে। ও বেরিয়া যাওয়ার পর যেন সেটা খুলে পড়ে নেয়।
সকালে বর বেড়িয়ে যাওয়ার পর দৌড়ে রিডিং টেবিলের সামনে চলে এল স্ত্রী। টেবিলে রাখা চিরকুটটি হাতে তুলে নিল। ভাজ খুলেই দেখতে পেল সেই পুরনো প্রিয় অক্ষরগুলোকে। অতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ওর। হাসি হাসি মুখে পড়তে শুরু করল চিরকুটটি। তাতে লেখা –
তুমি আমার ময়না পাখি
তুমি আমার টিয়া
জনমের মত দিয়াছ আছোলা
করিয়া আমারে বিয়া
(বাকিটুকু ইতিহাস…)

জলে ভাসা দ্বীপ

চৌদ্দ শতকের আগ পর্যন্ত দক্ষিন আমেরিকার উরু (Uru) জাতীগোষ্টির লোকেরা হ্রদের কিনারে কাঠ, খড়, ছন ইত্যাদি দিয়ে নিজেদের তৈরি নৌকাতেই বসবাস করত; অনেকটা আমাদের দেশের বেদে সম্প্রদায়ের মতই। ডাঙায় বিচরণ আর নৌকায় ঘুম এই করে ভালোই কাটত যদি এমারা ইন্ডিয়ানরাও (Aymara Indians) একই এলাকায় বসবাস না করত। এমারা ইন্ডিয়ানরা ছিল দাঙ্গা হাঙ্গামায় উরুদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই এমারা ইন্ডিয়ানদের সাথে উরুদের নিয়মিত ঝামেলা-মারামারি লেগেই থাকত। শেষমেশ এমারাদের সাথে না পেরে নিজেদের পুরোপুরি জলে নিয়ে যেতে বাধ্য হল উরু’রা।
উরুদের তৈরি নৌকায় উরু রমণী
চৌদ্দ শতকের শুরুর দিকের কোন একটা সময় উরু’রা বাসস্থান হিসেবে বেছে নিল ভাসমান দ্বীপ যা তারা তৈরি করেছে টিটিকাকা (Titicaca) হ্রদের উপর। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দ্বীপের সংখ্যা। দ্বীপ তৈরির মূল উপাদান আঁখ গাছ। মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয় গাছের ডালপালা, মূল আর কাণ্ড। শুধু দ্বীপ নয় উরুদের বাড়ি এমনকি তাদের ব্যবহারের নৌকাও আঁখ গাছ দিয়ে তৈরি।
আঁখ গাছ পানিতে দ্রুত পোঁচে যায় তাই নির্ধারিত ব্যক্তিরা নিয়মিত ভাবে প্রতি মাসে আঁখ গাছ পরিবর্তনের কাজটি করে থাকে।
এতো গেল উরু দের কথা এবার আসি মেক্সিকোর রিচার্ট সোয়া নামের এক ভদ্রলোকের কথায়। যিনি নিজের জন্য একটি ভাসমান প্রাসাদ বানিয়েছেন ইসলা মুখেরেস এ! শুধু ভাসমান হলেও নাহয় কথা ছিল, দ্বিপটি তিনি বানিয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে!
ভাসনাম জোয়েক্সি আইল্যান্ড 
ইন্টারনেট কানেকশন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার সরঞ্জাম, বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল, ওয়াশিং মেশিন, গোসলের জন্য জাকুজি ইত্যাদি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ দ্বিপটি বানাতে তার সময় লেগেছে সাত বছর। তিনি দ্বীপের নাম দিয়েছেন ‘জোয়েক্সি আইল্যান্ড’৷
ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি ভাসমান দ্বীপের উদাহরণ কিন্তু আরও আছে, এই যেমন – কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের উপকূলে ‘ফ্রীডম কৌভ’ বা ‘স্বাধীন দ্বীপ’। যেটি তৈরি করেছে ওয়েন অ্যাডামস (৬৬) এবং ক্যাথিরিন কিং (৫৯) দম্পতি।
ভ্যাঙ্কুভারের ‘ফ্রীডম কৌভ’ বা ‘স্বাধীন দ্বীপ’
১৯৯২ সাল থেকে তারা এই দ্বিপটির নির্মাণ কাজ শিরু করে। এটি অবশ্য ইট, কাঠ, রড, সিমেন্ট দিয়েই তৈরি করা হয়েছে।
এই দম্পতীর দুজনেই শিল্পী। তাদের নির্মিত এই দ্বীপটিরে রয়েছে ড্যান্স ফ্লোর, আর্ট গ্যালারি এবং গ্রিন হাউজ প্রযুক্ত ব্যবহার করে ফলফুল আর সবজী বাগান। আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা কি আর বলব।



কোরবানি বলে কথা

আর কয়েকদিন পরেই কোরবানির ঈদ বা ইদ। সেই উপলক্ষে সবাই নিজ দায়িত্তে রাস্তাঘাট, বাজার-মাঠ সর্বত্র ভিড় বাড়িয়ে চলেছে। এমনটা হওয়াই তো স্বাভাবিক। কোরবানির ঈদ বলে কথা। তবে এই ঈদে শপিংমলের চেয়ে গরু-ছাগলের হাটের দিকে মানুষের মনোযোগ থাকে বেশি। যার ফলে এই ঈদে গরু-ছাগল থেকে যোজন যোজন দূরে থাকা মানুষগুলোও হয়ে ওঠে পশু বিশেষজ্ঞ।

যাই হোক কোরবানি নিয়ে যেহেতু কচকচানি শুরু হয়েই গেছে তো একটা গল্প বলি – এক লোকের ছিল একটি ছাগল আর একটি গাধা। ছাগলটার সারাদিনের কাজ ছিল খাওয়া আর আরাম করা অন্যদিকে গাধাটা সারাদিন ধরে বোঝা টানত তার উপরে একটু গড়বর হলে মালিকের মার তো আছেই। তো ছাগলটা একদিন গাধাটাকে ডেকে বলছে – তোকে দেখে আমার বড্ড মায়া হয়, বুঝলি?
কেন? – গাধার প্রশ্ন।
না মানে, তুই সারাদিন এতো পরিশ্রম করিস তার উপরে মার খাস আর আমি সারাদিন কত আরামে থাকি, কোন কাজ নেই শুধু খেয়ে খেয়ে মোটা হচ্ছি।
‘তোকে তো যত্ন করবেই… সামনে তো কোরবানির ঈদ।’

আরেকটা গল্প বলি। আমার এক ফেবু বন্ধু (নাম মনে নাই) এটা লিখেছে তার ওয়ালে। বাবা-ছেলের কথোপকথন –
ছেলে – বাবা কোরবানির গরু কিনবেন না?
বাবা – হ্যাঁ, তাতো কিনতেই হবে; গাধা তো আর কোরবানি দেওয়া যায় না।

দিন শেষে একা

লাল রংটা কল্যাণের বেজায় অপছন্দ। কিন্তু আজ এই রঙটাই ওকে দেখতে হবে অনেকক্ষণ। তারপর…

হাতের ঘড়িটা একবার দেখেনিল কল্যাণ। তিনটা বেজে ছাব্বিশ। অনেক রাত। কিন্তু মোড়ের সিগারেটের দোকানটা এখনো খোলা। সারারাতই খোলা থাকে। খুব ইচ্ছে হচ্ছে গিয়ে একটা সিগারেট খেতে কিন্তু উপায় নেই, বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে। এঘড়ে কোন ছাতা নেই। এত রাতে মায়ের রুমে গিয়ে ছাতা নিয়ে আসার প্রশ্নই আসে না। অগত্তা সিগারেটের চিন্তাটা বাদ দিতে হল।
চিত হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে ও। ভাবছে – এখনই শুরু করবে কি না। ভাবতে ভাবতে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল বুক চিড়ে। কত রঙিন মনে হত একসময় জীবনটাকে। মনে হত যত সমস্যা সব বড় হলেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু না বড় হওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে সমস্যাগুলোও আরও বড় হয়েছে। ও কাওকে বুঝতে দেয়না, দীর্ঘশ্বাসগুলো চাপা দিয়ে দেয় বুকের মধ্যে। মাঝে মাঝেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতে চায় কিন্তু কাওকে বলে না।
একটা সময় খুব একাকীত্বে ভুগতো ও। খুব একা একা লাগত; খুব। তারপর নিজেই একসময় আবিষ্কার করল – একাকীত্ব আসলে দুর্বলতা নয় শক্তি, a source of energy. কারন? কারনটা খুব সহজ। একা মানুষের হারানোর ভয় থাকে না। এমন নয় যে ওর পৃথিবীতে কেউ নেই। আছে সবাই আছে – বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয় সবাই। কিন্তু এত মানুষের মাঝেও ও একা, বড় একা। মা ভাত বেড়ে খাওয়ায়, বাবা ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে, বোনের আদুরে শাসন, ভাইয়ের বায়না সবই ভালো লাগে তবুও কোথাও যেন একটা শূন্যতা, একটা ফাঁকা রয়ে গেছে যার ফলে জীবনটাকে বড় অর্থহীন লাগে। একবার ভেবেছিল বিয়ে করে ফেলবে অথবা একটা প্রেম। কিন্তু পরে ভেবে দেখল এতে ঝামেলা আরও বাড়বে। এতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা একজন বাড়া ছাড়া আর তেমন কোন লাভ হবে না। বরং একাকীত্বের এই যে উপভোগটুকু, এটাও আর থাকবে না। একাকীত্বই হয়তো ওর নিয়তি।
যাইহোক ওসব চিন্তা বাদ। এখন শুধুই মুক্তির চিন্তা। মুক্তি কেন? কারন এই একাকীত্বও আর ও উপভোগ করতে পারবে না খুব বেশি দিন, এটাও ওর কাছে খুব বোরিং লাগতে শুরু করেছে। ও বুঝে গেছে – একাকীত্বের দীর্ঘ উপভোগ বলে কিছু হয় না।

শুয়ে থেকেই একবার বালিশ থেকে মাথাটা তুলে দেখে নিল টেবিলের উপর ব্লেড টা আছে কি না। আছে।

সকাল সাড়ে আট টা
‘কল্যাণ, এই কল্যাণ ওঠ অফিস যাবি না?’ মা দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন আর ডাকছেন।
আর একটু পর
কল্যাণের দরজায় বাড়ির সবাই এসে জড়ো হয়েছে। উদ্বিগ্ন প্রতিটা মুখ। মা কাঁদছেন। দরজার নিচে দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে, লাল রক্ত, লাল…

অসুখ

একগাদা ওষুধ লিখেছে ডাক্তার। সেগুলো নিতেই আজ এদিকটাতে আসা। নয়তো এদিকের এই ভিড়ের মধ্যে কে আসতে চায়। শহরের এদিকটায় আসার একটা ভালো দিকও আছে – এখানে প্রায় সব ওষুধ পাওয়া যায় তাও আবার পাইকারি দামে।
ছোট দোকানটায় যায়গা বড়ই কম তবুও মানুষের উপচে পড়া ভিড়। পনের মিনিট হতে চলল দাঁড়িয়ে আছি তো আছিই। সিরিয়াল পাবার নাম গন্ধও নেই।

অবশেষে কাউন্টারে গিয়ে দাঁড়ালাম। প্রেসক্রিপশনটা দোকানদারের হাতে দিলাম, ব্যস। এবার শুধু অপেক্ষার পালা। আমার বাঁদিকটায় দেয়াল, দোকানের শেষপ্রান্ত আর ডানপাশে দাঁড়িয়ে আছে এক বৃদ্ধ। তার ওষুধ নেওয়া বোধয় শেষ তবুও একবার মিলিয়ে দেখছে ঠিকঠাক আছে কি না। আমি সারি সারি করে সাজানো ওষুধের বাক্স দেখে দেখে নাম পড়ছি আর ভাবছি – সকল রোগের ওষুধ কি সত্যই পাওয়া যায়।
হঠাৎ সিনিয়র একজন দোকানদার জুনিয়র একজনকে প্রশ্ন করল -‘ওই চাচা কি ট্যাকা দিছিল’? আমি ডানে তাকিয়ে দেখলাম বুড়ো নেই।
‘না তো ভাই’। জুনিয়র উত্তর দিল।
‘ট্যাকা না দিয়া গেল কই? জলদী যা, খুইজ্জা লইয়ায়।’

কিছুক্ষণ পর ছেলেটা সেই বৃদ্ধ লোকটিকে হাতে ধরে নিয়ে এলো। স্বাভাবিক ভাবেও নয় আবার ঠিক টানতে টানতেও নয়। তবে দেখে বুঝা যাচ্ছে বুড়ো অনুসুচনায় ভুগছে।
‘চাচা আপনে ট্যাকা দিছিলেন ওষুধের?’ সিনিয়রের সরাসরি প্রশ্ন।
‘মানে…ইয়ে…’ বুড়ো আমতা আমতা করতে লাগল। ‘আসলে ভুল করে নিয়ে চলে গেছিলাম। এই নিন…’ বলে ওষুধগুলো কাউন্টারে রাখলেন। হঠাৎ বুড়োর চোখ জোড়া যেন ছলছল করে উঠলো।
‘ওষুধ চাই নাই তো, ট্যাকা দেন ওষুধ নেন।’
বুড়ো চুপ।
‘চাচা সমস্যাডা কি কনতো।’
আমরা আশেপাশের সবাই কৌতূহলী চোখে তাকিয়ে আছি বুড়োর দিকে। বুড়ো একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল, বলল – ‘আমার নাতিটা তিন দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি, আমার কাছে ওষুধ কেনার টাকা নাই’।

[সত্যা ঘটনা অবলম্বনে]

ছুটিবিহীন জীবন

এক ভদ্রলোক তার স্ট্যাটাসে লিখেছে, অনেকদিন ছুটি নেয় না, প্রায় দু’বছর। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয় না, আত্মীয়দের বাসায় যায় না। শুধু অফিস টু বাসা, বাসা টু অফিস। আর এটা নাকি তার স্ত্রীর উৎসাহেই হয়েছে। লেখাটা পরে মনে হল না তিনি এই ব্যপারটায় অখুশি। তবে এখানে আমার একটা দ্বিমত আছে।

তোরাহ’তে আছে মসী (মুসা আঃ) যখন দেখলেন যে হিব্রু দাশ জাতির জীবনে ছুটি বলতে কিছু নেই তখন তিনি শনিবার কে হিব্রুদের ছুটি হিসেবে ঘোষণা করেন। দিনটিকে হিব্রুতে সাব্বাত বলা হয়। সহজ করে বলা যায় ‘মসীর দিন’। এটিকেই বলা চলে অফিসিয়ালি ছুটির প্রথম ঘোষণা। যাইহোক, মসী বুঝতে পেরেছিলেন যে সপ্তাহে এক দিন ছুটি না পেলে জীবনের সাভাবিক ছন্দ বা গতি কোনটাই থাকে না।

একই কারনে আমিও ছুটি না নেওয়াটাকে অপছন্দ করি। অবশ্য কিছু প্রতিষ্ঠান মালিকের কাছে ছুটি না নেওয়াটা একটা আইকনিক ব্যপার রীতিমত। সম্ভবত এক-দু’বছর আগে এক প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক পুরষ্কার পান এই কারনে যে তিনি তার সার্ভিস লাইফে একদিনও ছুটি নেননি। আমার হিসেবে লোকটিকে পুরষ্কার না দিয়ে তিরস্কার করা উচিৎ ছিল। কারন তিনি রীতিমত অসামাজিক একজন লোক। ‘ছুটি নেননি’ এই ব্যপারটা থেকে এটা পরিষ্কার যে তিনি নানান ধরণের দাওয়াত এমনকি শেষকৃত্তের অনুষ্ঠানেও ঠিকমত যোগ দেননি। কারন কোন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গেলে, পুরো অনুষ্ঠানে ঠিকমত অংশ নিয়ে শেষ করলে এক দিন তো নিশ্চিত ভাবেই লাগবে। কিন্তু তিনি তা নেননি। তাই তাকে সহজ ভাষায় অসামাজিক বলাই যায়।

সেই শিক্ষক লোকটির উদাহরণ দিয়েছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মালিক। উনার এহেন অসামাজিকতা ভালো লাগার কারন আছে বৈকি!

বৃহস্পতিবার, ৩ আগস্ট, ২০১৭

জীবনের মূল্য

মানুষের জীবনে ঘুম এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যায়গা জুড়ে রয়েছে। ডাক্তাররা বলেন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিৎ। মানে দিনের তিন ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ এই নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি জীবনের একতৃতীয়াংশই ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবেন। কোন মানে হয়? আমার অন্তত এই নিয়ম একেবারেই অপছন্দ। যদিও সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী ব্যাপারটাকে দেখেছিলেন অন্য ভাবে। একবার এক পত্রিকার সাংবাদিক তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করল – আপনি সাধারনত কখন ঘুমাতে যান? উত্তরে শিবরাম বাবু বললেন – যখন ঘুম পায়। আর কখন ঘুম থেকে ওঠেন? শিবরাম বাবু বললেন – যখন ঘুম ভাঙে।

ঘুমের কথা বলতে বলতে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো। এক শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন – ঘুম পেলে আমারা বিছানায় যাই কেন? ছাত্র উত্তর দিল – বিছানা আমাদের কাছে আসে না তাই।

কম ঘুমিয়ে শরীর খারাপ করার পক্ষপাতী আমি নোই। তবে জীবন অমূল্য। শুধু ঘুমিয়ে এর একটা বড় অংশ শেষ করে দিতে আমার বড় আফসোস হয়। জীবনের মূল্য নিয়ে একটা ঘটনা বলি শুনুন – প্রায় পাঁচশ বছর আগেকার কথা। বর্তমান পাকিস্তানে পাঞ্জাব নামের যে প্রদেশটি রয়েছে সেখানে থাকতেন গুরু নানাক শাহ্‌। যিনি শিখ ধর্ম প্রবর্তন করেন। তার কাছে এক লোক গিয়ে বলল – বাবাজী জীবনের মূল্য কি আমাকে বোঝান? বাবাজী কোন উত্তর দিলেন না তবে লোকটিকে একটি চকচকে পাথর দিয়ে বললেন – বাজারে যাও, এই পাথরের কত দাম হয় জেনে আস কিন্তু বিক্রি করো না। লোকটি চলে গেল বাজারে।

বাজারে ঢুকেই সে দেখতে পেল এক লোক আলু বিক্রি করছে। সে তার কাছে গেল। বলল – ভাই এই পাথরটার কত দাম হবে তুমি বলতে পার? দোকানদার পাথরটা ভালো মত দেখে বলল – হুম, বেশ চকচকে। এটা আমাকে দিয়ে যাও বিনিময়ে এক সের আলু নিয়ে যাও। লোকটি বলল – না ভাই বাবাজী বলেছে শুধু দাম জানতে, বিক্রি করা যাবে না।

আলুর দেকান পেছনে রেখে কিছুদূর এগোতেই দেখা মিলল এক ফলের দোকানের। সেই দোকানের মালিককে পাথরটি দেখাতে সে বলল – এই পাথরের বিনিময়ে আমি তোমাকে ভালো কিছু ফল দিতে পারি। লোকটি রাজি হলো না কারন বিক্রির অনুমতি নেই।

এরপর তার দেখা হলো এক স্বর্ণকারের সাথে। সে লোকটিকে বলল – বাঃ এতো বেশ দামি পাথর এটা তুমি আমায় দিলে আমি তোমাকে হাজার মুদ্রা দিতে পারি। লোকটি তাকেও না দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে গেল।

এবার দেখা মিলল এক জহুরীর। পাথরটি দেখে সে বিস্মিত হয়ে লোকটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল – এই পাথর তুমি কথায় পেলে? লোকটি বলল – আমি যেখানেই পাই, এক কত দাম হবে তাই বলুন। আরে পাগল, এর দাম আমি কেন কোন জহুরীর পক্ষেই দেওয়া সম্ভব না; এটা অমুল্য – জহুরী বলল। এই শুনে লোকটি ছুটতে লাগলো নানাকজীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

ছুটতে ছুটতে লোকটি গুরু নানাকের কাছে এসে বলল – বাবাজী কি এই পাথর? কেন এর এত বৈচিত্র্যময় মূল্য? আমার জীবনের সাথে এর কিই বা সম্পর্ক?

গুরু নানাক মুচকি হেসে উত্তর দিলেন – মানুষের জীবনও এই পাথরের মত। সে চাইলে একে এক সের আলুর দামে বেচতে পারে অথবা কিছু ফলের দামে কিংবা হাজার মুদ্রায়। কিন্তু যদি সে চায় তবে জীবনকে অমূল্যও বানাতে পারে। ব্যক্তির জীবনের মূল্য নির্ভর করে তার দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নীড়হারা

"ঘুম পাচ্ছে বাবা? এক্ষুনি বাসায় চলে যাব..." বলতে বলতে ছেলেকে কোলে নিয়ে শহীদ মিনারের গেইট থেকে বেরিয়ে গেল লোকটি। সেদিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থানটা যেন আরেকবার বুঝতে পারলো মহিলাটি। মহিলা বলাটা ঠিক মানানসই হচ্ছে না আবার তাকে মেয়েও বলা যাচ্ছে না। সে আগে থেকেই জানতো, এখানে আজ জায়গা হবে না। তবুও এসেছিল।

শহীদ মিনার চত্বরের কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছাকাছি যে বেঞ্চটা আছে তাতে সে ঘুমায়, সাথে থাকে তার হামাগুড়ি দেওয়া ছেলেটা। বহুদিন হলো তারা এখানে ঘুমায়। বিশেষ বিশেষ দিনে যখন সবাই ছুটি পায় তখন তাদেরও ছুটি দেওয়া হয় সিমেন্টের তৈরি শক্ত বিছানাটিকে। কিন্তু ঘুম কি ছুটি নেয় কখনো? তাই তো ফিরে আসা। 

ছেলেটা বারবার ঘুমে ঢলে পড়ছে। অযথাই আর সময় নষ্ট করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলো সে। আজ রাতটা কাটানোর জন্য কোন একটা নিরিবিলি ফুটপাথ খুঁজে নিতে হবে।

সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ফুল

ও বুদ্ধিটা বের করেছে গত বছর। তাই কয়েকদিন আগে থেকেই তক্কে তক্কে ছিল। ফুল জোগাড় করবে বলে। খুব কঠিন হলো না কাজটা। কাছাকাছি একটা বাসা আছে, তার মালিকটা খুব ভালো। মাসে এক-দু বার ওকে দিয়ে বাসার সামনের অংশ আর বাগানটা পরিষ্কার করায়। যেদিন কাজটা করে দেয় সেদিন পেট ভরে খাওয়ায় আবার কটা টাকাও দেয়। টাকাটা পেলে ওর বেশ ভালোই হয়। ওর আর সেদিন কাগজ-প্লাস্টিকের বোতল এসব কুঁড়াতে হয় না। খেলেই সারাটা দিন কাটিয়ে দেয়। সেই বাসার মালিককে বলে ও কটা ফুল চেয়ে নিল। রাতে এগুলো নিয়েই যাবে।

রাত সাড়ে দশটা। ও দাঁড়িয়ে আছে শহীদমিনারে ঢোকার গেইটের উল্টো দিকে। কয়েকটা ফুল নিয়ে। আজ এগুলো বেচতে পারলে কালকের দিনটা একটু আরামে কাটবে। খেলার জন্য অনেকটা সময় পাবে।

হঠাৎ একটা পুলিশ ওকে দেখে খেঁকিয়ে উঠল - 'অই ফকিন্নির বাচ্চা এইখানে কি করস, যা এইহান থাইকা'। ও বুঝতে পারলো এখানে থাকা যাবে না, পুলিশ গরীবদের পছন্দ করে না আর ফুলগুলো বেচতে হলেও গেইটের কাছে যাওয়া দরকার। তাই রাস্তার উল্টো দিকে গেইটটা লক্ষ করে দৌড় লাগাল।

গাড়িটা জোর ব্রেক কষেও থামতে পারল না। গরীব বাচ্চাটা চাপা পড়ল দামী টায়ারের তলায়। হাত থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ল ফুলের তোড়া সাথে একটু খেলতে যাবার ইচ্ছে।

মাইকে গান বাজতে শুরু করল - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ম্যাসেঞ্জার

কয়েক সেকেন্ড পরপর ম্যাসেজ আসছে।
- কি উত্তর দাও না কেন?
- এখন কথা বল না কেন?
- বল কথা, বল :(
- প্লিজ...
- কি গো :(

মোবাইলটা হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো লোকটি। কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। ওদিকে মেয়েটা উত্তরের জন্যে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে। মেয়েটার ম্যাসেজে এতক্ষণের রাগারাগির ঝাঁজটা আর নেই।
মধ্যবয়সী গুরুগম্ভীর লোকটির চোখদুটি ছলছল করে উঠলো। কি করে বলবে মেয়েটিকে যার উত্তরের জন্যে সে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে কয়েক মিনিট আগেই সেই ছেলেটি এক্সিডেন্টে মারা গেছে আর মোবাইলটা ছিটকে এসে পড়েছে তার পায়ের কাছে।

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

টুথব্রাশের ইতিহাস

ছবি গুগল থেকে
দ্বিতীয়বার দাঁত পড়ে গেলে বা ফেলে দিলে আর উঠবে না এই ব্যপারটা আমি কোনদিন মেনে নিতে পারিনি। আফসোস। তাই অনেকের মতো দাঁত বাঁচনর চেষ্টা করি বা করতে হয়।

এই দাঁতের মূল্য মানুষ হাজার হাজার বছর আগে থেকেই বুঝতে শুরু করে। সে জন্যেই ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় হাজার-হাজার বছর আগে যাখন টুথব্রাশ আবিষ্কার হয়নি তখন দাঁত পরিষ্কার করতে মানুষ নানান ধরণের খিলাল, গাছের ডাল, মাছের কাঁটা ইত্যাদি ব্যবহার করেছে।
প্রথম গাছের ডাল ব্যবহার করতে দেখা যায় বেবিলনে, যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ৩৫০০ বছর আগে। পশুর লোম দিয়ে প্রথম আধুনিক ব্রাশ বানায় চিন। সেও হাজার-বারশ বছর আগের কথা। তারপর ধীরে ধীরে জাপান ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়াতে থাকে আর এর মানোন্নয়ন হতে থাকে। যানা যায় নেপোলিয়ন নাকি ঘোড়ার লোমের তৈরি টুথব্রাশ ব্যবহার করতেন। প্রথম যে বইটিতে টুথব্রাশ ব্যবহারের কথার উল্লেখ পাওয়া যায় সেটি হলো ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ Anthony Wood এর আত্মজীবনীত (প্রকাশ কাল - ১৬৯০ ইং)। টুথপেস্টের ব্যবহার এসেছে আরও পরে।


একটা ঘটনা বলি, একবার আশরাফ আলী থানবী (র.) এর কাছে এসে এক লোক বলল - আমরা যখন জন্মাই তখন আমাদের মুখে দাড়ি থাকে না তাই আমার মতে ওগুলো রাখার প্রয়োজন নেই, কেটে ফেলা উচিৎ।

উত্তরে থানবী (র.) বলেন - আমরা মুখে দাঁত নিয়েও জন্মাই না তাহলে তো ওগুলোও ফেলে দেওয়া উচিৎ।
একটি দাঁত বিষয়ক জোকসঃ
এক লোক দাঁত তুলবে, গেছে ডাক্তারের কাছে। কিন্তু ভুল করে ঢুকে গেছে পাইলসের ডাক্তারের চেম্বারে।
ডাক্তার - উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।
রোগী - এতো লম্বা রাস্তা দিয়ে দাঁত তুলবেন?

টিপসঃ মাসে অন্তত একবার টুথব্রাশ ভালমতো গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা উচিৎ অথবা পরিবর্তন করা উচিৎ। তুলনামূলকভাবে নরম ব্রাশই দাঁতের জন্য ভালো।

শুভ ব্রাশিং :)

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

প্রায়শ্চিত্ত

কত হলো বয়স? এ'বছর চৌষট্টি হবে বোধয়। এখন আর ওসব মনে থাকে না। মনে রেখেই বা কি লাভ? জীবনের সকল হিসেবেই যখন গড়মিল তখন বয়সের হিসেব করা অর্থহীন।
নদীর ধারে আসেননি বহুদিন। আজ অফিস না থাকায় চলে এলেন। অফিস বলতে কোচিং; একটা কোচিঙে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরী করেন তিনি।
সকালের এসময়টায় নদীর ধারে মানুষজন কম থাকে। ভালোই হয়েছে। তিনিও চাইছেন না এখন মানুষের মধ্যে থাকতে। একটু একা থাকতে চান। ভাবতে চান।

স্ত্রী সারাজীবন বিনা অভিযোগে পাশে থেকেছেন। ভালোমন্দ কত সময় গেছে, সব সময় মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেকসময় পারেননি অসুস্থতার কারনে। বেচারি সাড়া জীবন বিভিন্ন অসুখবিসুখেই কাটিয়ে দিল। কেনাকাটা খুব পছন্দ তার। একসময় যখন সংসারের অবস্থা ভালো ছিল তখন সপ্তাহে অন্তত দুবার যেতেন শপিঙে। আর এখন...কত বছর হয়ে গেল তেমন করে শপিঙে যান না। কখনো যদিও যান, তিনি খেয়াল করে দেখেছেন প্রয়োজনীয় জিনিসটার দোকানে ঢুকে কিনে চলে আসেন। শাড়ি, গয়না, জুতা, ক্রোকারিজের দোকানের দিকে পারতপক্ষে তাকান না, যেটুকু দেখেন তা আড়চোখে যেন তিনি বুঝতে না পারেন।

বড় ছেলেটা কিছুই করে উঠতে পারছেনা এখনো। কয়েকটা টিউশনি করে, ঐ দিয়েই চলে। কখনো চায় না কিছু। কিছু বলেও না। বাসায় থাকলেও বোঝা যায় না ও ঘড়ে আছে কি নেই। ছোটবেলায় কিন্তু ও এরকম ছিল না। অন্য বাচ্চাদের তুলনায় একটু চুপচাপ ছিল বটে কিন্তু অনেক প্রশ্ন করত। এটা কি, ওটা কি, এটা ওরকম কেন, সেটা ওরকম না কেন? উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে শেষে ধমক দিয়ে চুপ করাতে হতো। তাতে কিছুক্ষণ চুপ থাকতো তারপর আবার শুরু হয়ে যেত। সেই ছেলেটা এখন কথাই বলে না। শ্মশানের মতো শান্ত হয়ে গেছে।
লেখাপড়াটাও শেষ করতে পারল না। মাঝে সংসারের অবস্থা এত খারাও হয়ে গিয়েছিল যে ওকে লেখাপড়াটা ছেড়ে দিয়ে একটা দোকানে কাজ নিতে হলো। এখন টিউশনি করে চলছে। একটা ভালো চাকরীর চেষ্টা ও করছে কিন্তু তিনি কোন আশার আলো দেখছেন না কারণ ছেলেটা পর্যাপ্ত লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি আর ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্যও তার নেই।

তার মেয়েটা ছেলেটার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। ভাইবোনে বেশ মিল ওদের। মেয়েটা একদিন হঠাৎ বলে দিল - 'লেখাপড়া করব না'। ছেলেটা বলেছিল করতে কিন্তু বেশি চাপ দেয়নি, হয়তো শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার ভয়ে। সেই থেকে ঘড়ে বসে আছে মেয়েটা। বিয়ের ব্যবস্থাও করে উঠতে পারছেন না অথচ মেয়ের বয়স তো থেমে নেই।

একটা সময় ছিল যখন তিনি প্রচুর রোজগার করতেন ব্যবসা করে। তখন ভাইদের অবস্থা বেশ খারাপ। আজ ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা যারযার মত করে গুছিয়ে নিয়েছে। বলতে গেলে সবার অবস্থাই বেশ ভালো। ওদের দুর্দিনে তিনি পাশে দাঁড়াননি। আসলে মাথায়ই আনেননি তাদের কথা। মাঝে মাঝে বাড়ীতে গেলে হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে আসতেন মাত্র। আজ যখন তার ছেলেমেয়েদের তার সামনে সদ্য জনাই কারা কোরবানির পশুর মত ছটফট করতে দেখেন তখন তিনি বুঝতে পারেন সেদিন তার ভাই আর তাদের ছেলেমেয়েদের কষ্ট।

ছোটবেলায় তিনি যে স্কুলে পড়তেন তার দেয়ালে নানান উক্তি লেখা থাকত। একটা উক্তি তার এখনো মনে আছে - 'মানুষকে তার পাপের শাস্তি কিছুটা হলেও জীবদ্দশায় ভোগ করতে হয়'।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাটার ভাইয়ের ইতিহাস

বাটার ভাইয়ের ইতিহাস
+++++++++++++++++
"ডিস্টাব করিস না, থাণ্ডার প্যারালাইজে আছি।" এটা বাটার ভাইয়ের কমন ডায়লগ। খুব চিন্তার মধ্যে থাকলে এটা সে বলবেই। তো এহেন বাটার ভাই কি করে বাটার ভাই হলেন সে এক ইতিহাস বটে।

আমরা তখন এসএসসি ডিঙিয়ে সবে কলেজ জীবন স্টার্ট করেছি। অল্প বয়সি দাড়িগোঁফ কেটে-ছেঁটে আজব সব স্টাইল করে আর শার্টের কলারটা উঁচু করে এলাকায় টহল দেই। বাটার ভাই তখন লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে নিয়মিত আমাদের সাথে পার্কে আড্ডা দেয়। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে তার বক্তব্য - "ওইসব বইটই আমার লাইগা লেখছে না"।

সে সময় একবার হোল কি, বাটার ভাইয়ের ব্যাপক ইচ্ছা হল ফর্সা হওয়ার। যে যা বলছে তাই করছে। ফর্সা তাকে হতেই হবে। কোত্থেকে যেন শুনে আসলো গায়ে বাটার/মাখন মেখে রোদে বসে থাকলে ফর্সা হওয়া যায়। ব্যস, আর কে আটকায়। একদিন দুপুরে হঠাৎ দেখা গেল বাটার ভাই বাসার ছাদে প্রায় দিগম্বর হয়ে গায়ে বাটার মেখে চিত হয়ে শুয়ে আছে। আশেপাশের বাড়ি থেকে যে লোকজন তাকে দেখে দাঁত ক্যালাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়ালই নাই।

তারপর থেকেই সবাই তাকে বাটার বলে ডাকতে শুরু করে আর সিনিয়ার হওয়ায় আমরা বলি বাটার ভাই।

আজকাল বাটার ভায়ের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। উদাস উদাস ভাব, খালি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

জিজ্ঞেস করলাম - "কি হয়েছে?"
"দিলডা পকিষ্টিক লাইট হইয়া গেছে রে।" বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
বুঝলাম হৃদয় ঘটিত ব্যপার। সবার সাথে আলোচনা করা দরকার।

বিকেলে সবাইকে সাথে নিয়ে বাটার বাইয়ের কাছে বসলাম। বাবু জিজ্ঞেস করলো - "ভাই কি হয়েছে? খুলে বলেন?"
"কার প্রেমে পড়েছেন?" - সৌরভের প্রশ্ন।
"নিপা, নিপায় আমার দিলডা লইয়া গেছে রে।" বাটার ভাই যাত্রার নায়কের মত করে উত্তরটা দিলেন।
"হুম" - সবাই একসাথে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা।
"ফোন নাম্বার লাগবে?" - চঞ্চল বলল। যে কোন মেয়ের নাম্বার যোগাড়ের বিষয়ে ও একজন এক্সপার্ট। সে নিজেকে লাভ গুরু দাবী করে, যদিও আজ অব্দি একটাও প্রেম করতে পারে নাই।
"আরে নারে, কথা হইছে।" বাটার ভাই একটু বিরক্ত হল।
"তাহলে আর সমস্যা কি?" আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
"কথা হইছে তয়..." এটুকু বলে একটু থামল।
"তবে কি?" চঞ্চল আগ্রহী হয়ে উঠলো।
"বলছে প্রেমও করবে তয়..."
"তবে কি?" এবার সবাই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
"তয়... সাদা সাহেবগ মতন ঠ্যাং গাইড়া প্রস্তাব দিতে কইছে।" বুঝলাম ইংরেজি কায়দায় হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রপোজ করতে বলেছে।
চঞ্চলের উৎসাহ এবার সবথেকে বেশি। আমাদেরও কিছু কম না। "আমি আপনাকে প্র্যাকটিস করাব, আমরা সবাই থাকব আপনার সাথে।" উপর- নিচ মাথা নাড়লাম আমরা সবাই।

এটাই বাটার ভাইয়ের প্রথম প্রেমে পড়া নয়, বছরে দু'তিন বার সে এরকম প্রেমে পড়ে! কিন্তু এইবারি প্রথম তাকে ইংরেজি কায়দায় প্রপোজ করতে হচ্ছে।

টানা দুদিন দিনে দুবেলা করে চলল প্র্যাকটিস। সে এক দেখার মত জিনিস। একবার ডান হাঁটুর যায়গায় বাম হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে ফেলছে, একবার মাফ চাওয়ার মত করে দুহাতে ফুল ধরছে কখনো আমাদের কাওকে দেখে বলছে - "তরে দেইখ্যা ভাব আইতাছে না", আর ইংরেজির কথা আর নাই বা বললাম।

যাইহোক, শেষমেশ দুদিন পর নিপা মানে আমাদের হবু ভাবির কাছে পাঠানো হল বাটার ভাইকে। পার্কের একটা কোনায় চলবে এই প্রপোজ পর্ব। আমরাও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি যেন কোন গণ্ডগোল হোলে সামলাতে পারি।

বাটার ভাই হাঁটু গেঁড়ে বসল, তারপর ডানহাতে একটা লাল গোলাপ উঁচু করে ধরে তাকাল তার হবু গার্লফ্রেন্ডের দিকে। বলল - "আই... লাভ ইউ... রিপা।"

"কি? রিপা কে?" - নিপা ভাবি রিতিমত চিৎকার করে প্রশ্নটা করলেন। এই প্রথম আমরা তার কথা শুনলাম। "তোমার আগের গার্লফ্রেন্ড?"

"হ" বাটার ভাইয়ের উত্তর। বাকিটা ইতিহাস!

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খেলনা

সেলিম মায়ের সাথে প্রতিদিনি আসে এবাড়িতে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়েই চলে আসে। মা ওকে ড্রয়িং রুমের কার্পেটের উপর বসিয়ে রেখে কাজ শুরু করে। অনুমতি ছাড়া ও যেতে পারে না কোথাও।
মা কাজ করে, ও বসে বসে দেখে। সকালে এসেই পুরো বাড়িটা ঝাড়ু দেয় তারপর চলে যায় রান্নাঘরে। রান্না-বান্না হলে সবার জন্য খাবার টেবিলে বেড়ে দেয়। সবাই যারযার মতন খেতে থাকে আর মা এবাড়ির বাচ্চাটা যে কিনা সেলিমের সমবয়সী তাকে খাইয়ে দেয়।
খাওয়া শেষ হলে ছেলেটাকে স্কুলের জন্য পোশাক পরিয়ে তৈরি করে দেয়। তারপর একে একে সবাই যখন চলে যায় তখন মা ওকে নিয়ে খেতে বসে রান্নাঘরে। খাওয়া শেষ করে মা শুরু করে বাড়ির আসবাবপত্র ঝাড়পোছের কাজ। ও বসে থাকে কার্পেটের উপর, কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই।
মাঝে মাঝে এবাড়ির গুরুগম্ভীর লোকটা দুপুরের আগেই বাড়ি চলে আসে তখন মা আগেভাগেই রান্না চাপিয়ে দেন। লোকটাকে দেখলেই ভয় লাগে। ওকে ভয় দেখাতেই যেন আজকেও দুপুরের আগেই চলে এসেছে।

এরকম সময় ও চাইলে বাড়িটা ঘুরে দেখতে পারে কিন্তু তা ও করবে না। ও চলে যাবে বাচ্চাটার রুমে। ওখানে অনেক খেলনা - বল, পুতুল, বন্দুক, গাড়ি আরও কত কি। ওঘর থেকে মায়ের হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। এখন এমন কোন খেলনা দিয়ে খেলা যাবে না যেটা শব্দ করে, তাহলে মা টের পেয়ে যাবে। নতুন নতুন খেলনা দিয়ে খেলতে দারুণ ভালো লাগে ওর। পুরনো বা নষ্ট হয়ে গেলে অবশ্য ওকে দিয়ে দেয় খেলনাগুলো কিন্তু তখন ওগুলো দিয়ে খেলতে অতটা ভালো লাগে না। বাবা থাকলে হয়তো ওকে দুয়েকটা নতুন খেলনা কিনে দিত। বাবাযে কোথায় চলে গেছে...
খেলনাগুলোয় হাত বুলাতে বুলাতেই অনেকটা সময় চলে গেল, ওকে এবার ড্রয়িং রুমে চলে যেতে হবে। পাশের রুমে মা আর ঐ লোকটার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

জাতক ও জাতকের গল্প

ছবি গুগল থেকে
ভারতের প্রাচীনতম গল্পসংগ্রহের নাম হল "জাতক", পালি ভাষায় "জাতকত্থ বন্ননা"। জাতক হল বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনির সঙ্কলন। অনেকের মতে 'জাতক' হল পৃথিবীর সমস্ত ছোট গল্পের উৎস। সিংহলি ভাষায় যে জাতক প্রচলিত আছে, বর্তমানের "জাতক" তারই অনুবাদ। সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যাইয়ের মতে - "জাতকের গল্পগুলো ভারতের প্রাচীনতম সঙ্কলন, এদের কিছু কিছু কাহিনি বুদ্ধের জন্মের পূর্ব থেকেই চলিত, কতগুলি বুদ্ধের সমকালীন, কতগুলি বা পরবর্তী। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক পর্যন্ত জাতককাহিনির নির্মিতিকাল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।" এর গল্পগুলোর অনেকগুলিই কিছুটা পরিবর্তিত অবস্থায় পাওয়া যায় 'আরব্য উপন্যাস'এ।

একটি জাতকের গল্পঃ
পূর্বজন্মে বুদ্ধ একবার পাখিদের রাজা হয়ে জন্মেছিলেন। সে সময় তার দলের পাখিরা দূর দূরান্তে যেত খাবার খেতে। কিন্তু কাছেই একটা রাস্তা ছিল যার উপর দিয়ে প্রায়ই শস্যবোঝাই গাড়ি যেত। যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে শস্যদানা পড়তো রাস্তায় কিন্তু পাখিরা এসব খেত না ভয়ে। তাদের ভয় দেখাত দলেরই একটি পাখি, সবাই তাকে ডাকত - অনুশাসিকা। এই নামে ডাকার কারণ, তার অনুশাসনের কারনেই কেউ রাস্তায় যেত না। সে সবাইকে বলতো - 'রাস্তায় যেও না, যে কোন সময় গাড়ির চাকার নিচে পড়তে পার।' কিন্তু সে নিজে সবার আড়ালে রাস্তায় গিয়েই খাবার খেত। সবাই এলে যদি তার খাবার কমে যায় তাই সে সবাইকে এভাবে ভয় দেখাত।
একদিন হলো কি, তার খাবার সময় একটা গাড়ি এসে হাজির। সে এতোই খুঁটে খুঁটে রাস্তা থেকে খাবার খাচ্ছে যে গাড়িটার দ্রুত গতির কথাটা ভাবলই না। শেষমেশ গাড়িটা তার উপর দিয়েই গেল। মারাগেল অনুশাসিকা।

এই জাতকের শিক্ষা : নিজে সাবধান না হযে অন্যকে সাবধান করা কোন কাজের কথা নয়।

বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সরস্বতী কথন

রাজা রাভি বার্মার আঁকা সরস্বতী
সরস্বতী জ্ঞান, সঙ্গীত ও শিল্পকলার হিন্দু দেবী। ঋগ্বেদে তিনি বৈদিক সরস্বতী নদীর অভিন্ন এক রূপ। তিনি হিন্দু সৃষ্টিদেবতা ব্রহ্মার পত্নী এবং লক্ষ্মী ও পার্বতীর সঙ্গে একযোগে ত্রিদেবী নামে পরিচিতা। উল্লেখ্য এই ত্রিদেবী যথাক্রমে ত্রিমূর্তি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা বিষ্ণু ও সংহারকর্তা শিবের পত্নী। হিন্দুদের বিশ্বাস, সরস্বতী প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ প্রসব করেন। হিন্দুধর্ম ছাড়াও খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকে রচিত মহাযান বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাযান সূত্র-এও সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরাল(রাজহাঁস)বাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।
পরিশেষে একটা বস্তাপচা কৌতুকঃ
বাবা ছেলেকে সরস্বতী দেবীর মূর্তি দেখিয়ে বলছেন - বাবু ঠাকুর প্রণাম কর, ইনি তোমায় জ্ঞান দেবেন।
ছেলে - তাহলে পায়ের কছে সবসময় বসে থাকা পুরুতমশাইয়ের এই অবস্থা কেন? তার তো নাসায় থাকার কথা।

রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

ওরা

ওদের দুজনকে দেখলেই বুঝা যায়, মেড ফর ইচ আদার। হাত ধরাধরি করে সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠে আসছে। ফিসফিস করে কি যেন বলছে আর হেঁসে হেঁসে এ ওর গায়ে গিয়ে পরছে।

এই সন্ধ্যেবেলা একজোড়া যুবক যুবতী এমনি এমনি তো আর আসেনি এখানে। কিইবা করার আছে ওদের। এসব তো আর যেখানে সেখানে করার উপাই নেই। অগত্যা এই নির্মাণাধীন বিল্ডিংটাকেই বেঁছে নিতে হলো।

আকাশে পূর্ণিমা কিন্তু এখানে, এই বিল্ডিঙে কোন আলো নেই। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একটা বিশাল কাল অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। একটা বহুতল বাড়ির কঙ্কাল। ওদের অবশ্য এসব ভাবার সময় নেই। ইচ্ছেটা ওদের মধ্যে এখন খুব প্রগার।

ওরা যায়গা খুঁজছে। রুমগুলো এখনো তৈরি হয়নি। শুধু দেয়াল উঠেছে, না আছে জানালা, না আছে দরজা। একটা ঘর দেখে ওরা এগিয়ে গেল। হুম... এই ঘরটাই। পারফেক্ট। একদম পারফেক্ট দেখতে। যেমন শুনেছিলো ঠিক তেমনি।

ছেলেটা দেখতে বেশ নাদুসনুদুস, ফর্সা; টোকা দিলে যেন রক্ত জমে যাবে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। গোঙাচ্ছে। ওরা দুজন এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে, তারপর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো পরস্পর। মুচকি হাসল দুজনে।

দুজনের মুখের দুপাশ থেকে বেড়িয়ে এলো লম্বা দুটো দাঁত। ঝাঁপিয়ে পড়লো ওরা ছেলেটির উপর...

মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

একজন অন্যরকম লেখক

যেটা আপনি চাক্ষুষ দেখেননি, সেটার যথার্থ বর্ণনা আপনি দিতে পারবেন না। যদি রং চরিয়েও বলেন তাহলে হয় রং কম হয়ে যাবে নয়তো বেশি। এই ব্যাপারটা আমি গোঁড়াতেই বুঝেছিলাম, তাই যতক্ষণ কোনকিছু চাক্ষুষ না দেখছি লেখার প্রশ্নই ওঠে না।

ও (আমার স্ত্রী) বিছানার উপর, আমি বসে আছি ঘরের অন্য পাশে সোফার উপর। এখান থেকেও আমি ওর গায়ের সুগন্ধটা পাচ্ছি। কি এক তীব্র আকর্ষণ। চার বছর কেটে গেল তবুও কত মায়া। কি মিষ্টি মুখটা ওর, হরিণীর মতন চোখ, গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট, চুলগুলো যেন কালো মেঘ। ওর বুকে মুখ গুজে দিয়ে যে সুখ আমি অনুভব করি তা পৃথিবীর কোথাও আর পাবো না আমি জানি।

প্রায়ই চিন্তাটা মাথায় আসে, ওকে নিয়ে একটা প্রেমের কবিতা লিখি। হয়ে ওঠে না। রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার ছাড়া না আমি কিছু পড়ে স্বাদ পাই, না লিখে; লিখতে পারিও না অন্যকিছু। তবুও চেষ্টা করেছিলাম -

"এতো দেখি তবুও ইচ্ছে জাগে বারবার
তোমায় নিয়ে কবিতা লেখার ভাষা হয়নি যোগাড়"

যে থ্রিলারটা লিখছি তাতে একটা মেয়েকে কেন্দ্র করেই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে, রহস্য যখন অনেকটাই উন্মোচিত হয়ে আসছিলো তখন গল্পটাকে আরও একটু রুদ্ধশ্বাস করবার জন্যে মেয়েটাকে খুন করার একটা নতুন অংশ যোগ করেছি। তারপর... তারপর কি? তারপর যাই হোক, খুনের ঘটনাটা কিন্তু বেশ হয়েছে।

খুনি যে কিনা মেয়েটার পরিচিত, মেয়েটার সাথে তার সম্পর্কও ভালো; বাড়িতে আনাগোনাও আছে একদিন হঠাৎ মেয়ের বাড়িতে এসে হাজির। মেয়েতো অবাক, আবার ভাবল হয়তো কোন কিছু হয়েছে এখন বলতে চাইছে না। তাই খুব একটা চাপ দিলো না। তাকে গেস্টরুমে বসিয়ে সে চলে গেল রান্নাঘরে দুপুরের খাবার আয়োজন করতে।

দুপুরে দুজনে একসাথে খেলো, তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে মেয়েটি চলে গেলো তার রুমে আর খুনি গেস্টরুমে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। খুনি চুপিচুপি ঢুকল মেয়েটির রুমে। ঘুমিয়ে আছে, গাঢ় ঘুম। খুব ধীরে সে বেঁধে ফেললো মেয়েটির হাত আর পা। একটা পলিথিন ব্যাগ বের করল সে তার পকেট থেকে, পানির মত রংবিহীন পলিথিন। সেটার ভেতর ধীরে ধীরে মেয়েটির মাথাটা ঢুকাতে থাকলো। চোখ পর্যন্ত ঢুকাতেই মেয়েটির ঘুম ভেঙে গেল, দেরি করে ফেলেছে সে। খুনি এক টানে মাথার বাকী অংশটুকুও ঢুকিয়ে ফেললো ব্যাগের ভেতর। মেয়েটি হাত-পা ছোঁড়াছুড়ির ব্যর্থ চেষ্টা করল। খুনি পকেট থেকে একটা স্কচটেপ বের করে মেয়েটির মাথাটা একটু তুলে পেঁচিয়ে দিলো গলায়। ব্যস।

অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ছটফট করতে করতে মারা গেল মেয়েটি। সে বসে বসে দেখল আর একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে গেল। তারপর... লাশ লুকানোর পালা।

এই অংশটা নিয়ে আমাকে আরো ভাবতে হবে। অবশ্য সেজন্য বেশি সময় নেওয়া যাবে না, এক-দুই দিনের মধ্যেই ভাবতে হবে; তা না হলে আমার স্ত্রীর লাশ পচেই দুর্গন্ধ ছড়াবে।

মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭

লেখক খুন

ভোর হতে না হতেই ইন্সপেক্টরের ফোন। তার পরেই চলে এলাম এখানে। একজন লেখকের বাড়ি। খুব বড় লেখক নন। মোটামুটি ধরণের। এলোমেলো জীবনযাপন করতেন। বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। কাল রাতে খুন হয়েছেন। সকালে পত্রিকাঅলা পত্রিকা দিতে এসে দেখে দরজা খোলা, ভেতরে লাইট জ্বলছে, জানালা খোলা হয়নি। এমনটা কখনো দেখা যায়নি এবাড়িতে। তাই কৌতূহলবশত ভেতরে ঢোকে। তখনই দেখতে পায় লেখকের লাশ, পুলিশে খবর দেয়। তাকে অবশ্য ইন্সপেক্টর এখন বারান্দায় বসিয়ে রেখেছে।

এলাকাটা নিরিবিলি। উঁচু উঁচু বিল্ডিং এখানে কম। একতলা পাকা বাড়িটার চারদিকে দেয়াল। ভেতরে যাই ঘটুক বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। গেইটটা অবশ্য বাইরে থেকে খোলা যায় তবে ওটা দেখে মনে হচ্ছে খোলাই থেকে সবসময়।

পঞ্চাশ-ষাট বছরের পুরনো বাড়ি। দুটো বেডরুম, একটা অব্যবহৃত, একটা ড্রয়িং প্লাস ডাইনিং রুম, তার লাগোয়া কিচেন ও বাথরুম। দেখে বোঝা যায় এক-দুবার সংস্কার করে বর্তমান চেহারায় আনা হয়েছে। বাড়ির সামনে একটু যায়গাও আছে, আগাছা পূর্ণ।

লেখকের লাশটা বেডরুমেই উপুড় হয়ে পড়েছিল। ছুরি দিয়ে করা হয়েছে খুনটা। ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো মেঝের অনেকটা রক্ত পড়ে আছে, জমাট রক্ত।

ভাবছি খুনের মোটিভটা কি কি হতে পারে। হঠাৎ ইন্সপেক্টরের ডাকে ভাবনাটা ছুটে গেল - 'আলি ভাই।'
'বলুন।'
'লেখকের এক বন্ধু এসেছে। বাসা কাছেই। কথা বলবেন?'
'অবশ্যই, ডাকুন।'

ইন্সপেক্টরকে দেখে আমি মাঝে মাঝেই ভাবি এদেশের কেতাবি জ্ঞান দিয়ে আর যাই হোক অপরাধী বের করতে শেখা যায় না। হাঁদাগুলোর আবার ড্যাং ড্যাং করে প্রোমোশনও হয়!

কাঁদো কাঁদো চেহারার যাকে ইন্সপেক্টর নিয়ে এলো তাকে দেখে খুব সাধারনই বলা যায়, মাঝারি হাইট, মাঝারি স্বাস্থ্য; পরনে ফুলহাতা শার্ট, কাল প্যান্ট, পায়ে স্যান্ডেল। ইন্সপেক্টর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
'ইনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ আলি বেগ আর আলি ভাই ইনি লেখক সাহেবের বন্ধু ইমতিয়াজ আহমেদ, আপনারা কথা বলুন আমি ওদিকটা দেখে আসছি।'
মাথা নেড়ে ইন্সপেক্টরকে সায় দিলাম।
'আমি ভাবতেও পারিনি ওর বুকে কেউ ছুরি চালাতে পারে, ওকে খুন করতে পারে।' কাঁদতে কাঁদতে বললেন ইমতিয়াজ আহমেদ।
'খুনটা করলেন কেন?'
'জি?' অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে।
'সহজ হিসেব, খুনটা আপনি না করলে যানবেন কি করে যে ছুরি দিয়ে করা হয়েছে আর ছুরিটা বুকে মেরেছে না পেটে। পুলিশ তো কাওকে যানায়নি।'

রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৭

মায়া সভ্যতা

মায়া’ পৃথীবির প্রাচীন সভ্যতা তথা ধর্ম সঙ্ককৃতির মধ্যে অন্যতম। যার সূচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ – ২৫০ অব্দ। এরা মেসোআমেরিকান একটি সভ্যতা। ‘মেসো’ গ্রিক শব্দ যার অর্থ মধ্য আর মেসোআমেরিকা বলতে বুঝায় মধ্য আমেরিকা মূলত মেক্সিকো। মেক্সিকান রাষ্ট্রগুলোর দক্ষিনে এবং বর্তমান গুয়াতেমালা, বেলিজ, এল সালভাডোর এবং পশ্চীমি হন্ডুরাসে এই সভ্যতা বিস্তার লাভ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ – ৯০০ অব্দ পর্যন্ত অনেক মায়া নগরীগুলো নানাদিক দিয়ে উন্নতি লাভ করে। ৯০০ শতক থেকেই এদের নগর সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। উন্নতির শীর্ষে অবস্থানকালে মায়ানদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ।এই সভ্যতাটি ছিল বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি এবং সাংস্কৃতিক ভাবে গতিশীল একটি সমাজ।


ভৌগলিক বিবরন:
মায়া অঞ্চলকে সাধারনভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. দক্ষিন মায়া উচ্চভূমি: গুয়াতেমালা এবং চাপাস দক্ষিন মায়া উচ্চভূমির অন্তর্ভূক্ত,
২. দক্ষিন বা মধ্য মায় নিচুভূমি: মেক্সিকান রাষ্ট্রগুলো কাম্পেছ, কুইন্টানা রোও এবং উত্তর গুয়াতেমালা, বেলিজ এবং এল সালভাডোর দক্ষিন বা মধ্য মায়া নিচুভূমির অন্তর্ভুক্ত,
৩. উত্তর মায়া নিচুভূমি: ইয়ুকাটান উপদ্বীপ এবং পুউক পাহাড়গুলো উত্তর মায়া নিচুভুমির মধ্যে পড়ে।

ইতিহাস:
খ্রীষ্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে মায়া অঞ্চলে লোক বসবাস শুরু করেছিল। সূচনাটা মূলত গুয়াতেমালাতেই হয়েছিল। তারা শহর ভিত্তিক সাম্রাজ্য গঠন করে এবং বিস্তারও লাভ করেছিল। কৃষির দিক থেকেও এরা তীব্রভাবে বিকশিত ছিল। মায়নরা অন্যান্য মেসোআমেরিকান জাতিদের সাথে বাণিজ্যে অংশগ্রহন করতো। বাণিজ্যের প্রয়োজনে এরা মেক্সিকোর উপসাগরিয় কূল Tainos এর ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্তও যেত বলে জানা যায়। মায়ানরা কাকাও, লবণ, সাগর শেল, নানা ধরনের পাথর ও কাচের মত দেখতে কালো রঙের আগ্নেয় শিলার ব্যবসা করত।



৯ম শতকের দিকে মায়া কেন্দ্রগুলোর দক্ষিনের নিচু ভূমিগুলো বিশেষ করে গুয়েতেমালার মায়া নগরগুলি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এর পেছনের কারণগুলোকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. প্রাকৃতিক কারন: অত্যাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বিদেশী আক্রমন, কৃষকদের বিদ্রোহ এবং বানিজ্য পথের পরিবর্ন বা ভেঙেপড়া,
২. প্রাকৃতিক কারন: পরিবেশ সংক্রান্ত বিপর্যয়, সংক্রামক রোগ, এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
ষোড়শ শতকে মায়নরা স্পেনিশদের দ্বারা আক্রন্ত হয়। তার পর থেকে প্রায় ১৭০ বছর নানা লড়াই আর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে স্পেনিশদেরকে সস্পুর্ন মায়ান অঞ্চল নিয়ন্ত্রনে নিতে হয়েছে।

স্থাপত্য:
মায়ানদের স্থাপত্যের মধ্যে ছিল ধর্মিয় সৃতিসৌধ, মন্দির, বসতবাড়ী ইত্যাদি। বাড়ীগুলো মূলত শহরের বাইরেই বেশি হতো কারন মায়ানরা ছিল কৃষি নির্ভর। তারা পিরামিডের মতো দেখতে উপাসনাগৃহ ও উৎসবস্থল তৈরি করেছিল। এগুলো ছিল তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। মায়াদের ৪টি প্রধান কেন্দ্র ও অনেকগুলো ছোট ছোট কেন্দ্র ছিল। প্রধান কেন্দ্রগুলোর একেকটি থেকে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকায় শাসনকার্য চালানো হত।



শিল্পকর্ম:
অনেকে গবেষক মনে করে থাকেন যে প্রাচীন যুগের শিল্প গুলোর মধ্যে মায়ানদের তৈরি শিল্পকর্গুলো সবচেয়ে সুন্দর। মায়ানদের শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে কারুকাজময় মন্দির, সৃতিসৌধ ও বাড়ীঘড়।কারুকাজের বিষয়বস্তু – গায়ক, নর্তকী, মায়ান মহিলারা, উৎসবে ধর্মযাজকরা, যুদ্ধ, মুখোস, দেবতা ইত্যাদি।



গনিত ও জ্যোর্তিশাত্র:
এই দুইটি বিষয়ে মায়ানদের জ্ঞন ছিল অভূতপূর্ব। গণিতে শূন্যের ব্যবহার, পজিশনাল নোটেশন নির্ধারণ করেছিল মায়ারা। তারা ২০ ভিত্তি সংখ্য ও ৫ ভিত্তি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতো। তারা বিশাল-বিশাল গাণিতিক হিসাব করতে পারতো। জ্যোর্তিশাস্ত্রে সৌর বৎসরের গননা, চন্দ্র ও শুক্র গ্রহের অবস্থান এমনকী সূর্যগ্রহনও আগেভাবে বলে দিতে পারত তারা!

সময়:
সময় নিয়ে মায়ানদের ভাবনা চিন্ত ছিল যথেষ্ট নির্ভুল ও নিয়মিত। অতীতের একটি অপরিবর্তনীয় বিন্দু থেকে মায়ার ইতিহাস গণনা করা হতো। যেমন-খ্রীষ্টান ধর্মের খেত্রে যিশুর জন্ম, গ্রিসের খেত্রে প্রথম অলিম্পিক ইত্যাদি। তাদের বর্ষ পঞ্জিকার একটি নির্দিষ্ট তারিখকে (৩১১৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের) কেন্দ্র হিসেবে ধরে নিয়ে তারা সময়ের হিসেব করতো।

বর্ষপঞ্জিকা:
K’in হল মায়া বর্ষপঞ্জিকার একটি সময় যা একটি দিনের অনুরুপ, উইনাল হল মাস যা ২০ দিনে সম্পন্ন হতো আর ১৯ উইনালে হতো ১ হাব বা বছর যা ৩৬০ দিন বুঝায়। এর সাথে যুক্ত করা হয় ওয়েব নামক ৫ দিনের একটি মাস যাকে মায়ানরা খুব অমঙ্গলজনক মনে করতো। মায়ানদের মাসের নাসগুলো হচ্ছে -
১) Pop (মাদুর)
২) Wo (কাল যুক্তাক্ষর)
৩) Sip (লাল যুক্তাক্ষর)
৪) Sotz (বাদুড়)
৫) Sek (?)
৬) Xul (কুকুর)
৭) Yaxk’in (নতুন সূর্য)
৮) Mol (জল)
৯) Ch’en (কাল ঝড়)
১০) Yax (সবুজ ঝড়)
১১) Sak (সাদা ঝড়)
১২) Keh (লাল ঝড়)
১৩) Mak (পরিবেষ্টিত)
১৪) K’ank’in (হলদে সূর্য)
১৫) Muwan (পেঁচা)
১৬) Pax (গাছ লাগানোর সময়)
১৭) K’ayab (কচ্ছপ)
১৮ )Kumk’u (শস্যভান্ডার)
১৯) Wayeb (অমঙ্গলজনক ৫ দিন)

তাছাড়া মায়ানদের ধর্মভিত্তিক বর্ষপঞ্জিকাও (Tzalkin) ছিল। এতে ২০ দিনে হতো ১ মাস, ১৩ মাসে হতো ১ বছর, ৫২ বছরে হতো ১ শতাব্দী। প্রতি ৫২ বছর পর পর ধর্মমাসের এবং সাধারন মাসের একই নামের দিনটিতে মায়ানরা বিপুল আয়োজনে উৎসব পালন করতো তখন নরবলির মাত্রও বৃদ্ধি পেতো।

লিখনপদ্ধতি:
খ্রীষ্টপূর্ব ২০০-৩০০ শতাব্দীতে মায়ানরা লিখতে শুরু করে। তাদের প্রতিটি চিহ্য বা বর্ন এক একটি শব্দ বা অর্থের প্রকাশ করতো।
লিখার জন্য ময়ানরা ব্যবহার করতো পশুর চুল বা লোম দ্বারা তৈরি তুলী, পাখির পালক দ্বারা তৈরি কলম। মায়া সমাজের সবাই লিখতে পারতো না তাই লেখকদের একটা গুরুত্বপূর্ন অবস্থান ছিল।

ধর্ম:
মায়ারা একটি সময়ের চক্র প্রকৃতিতে বিশ্বাস করতো। মায়া ধর্মযাজকদের কাজ ছিল এই চক্রগুলি ব্যাখ্যা করা এবং তাদের সমস্ত বর্ষপঞ্জিকার সংখ্যার সম্পর্কে একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা।
ধর্মিয় বর্ষপঞ্জিকার শুরু হতো আইমিক্র (Imix) এক দানবের পুজার মাধ্যমে। দেবতাদের মধ্যে ছিল আইক (IK) নামের বায়ু দেবতা, চিচ্ছেন (Chicchans) নামের সর্প দেবতা। এছাড়াও তারা আরো নানা দেব-দেবীতে বিশ্বাস করতো।
মায়ানরা বিশ্বাস করতো ১৩ জন দেবদেবীর মধ্যে ৬ জন সূর্যকে উদীত করতো আর ৬ জন সূর্যকে নামিয়ে আনতো, ১ জন কিছু সময়ের জন্য সূর্যকে মধ্য গগনে ধরে রাখতো। পৃথীবির অন্তঃপুরে জিবালবা (Xibalba) নামক স্থানে মৃতরা বসবাস করতো। ৪ স্তরের সেই স্থানটি ছিল খুব কষ্টের যা পাহারা দিতো ৯ জন দেবদেবী। প্রতি রাতেই সূর্য জাগুয়ারের বেশে অন্ধকার সেই জগৎ অতিক্রম করতো আর চার স্তর অতিক্রম করার পর পূর্ব দিগন্তে উদিত হতো।
সূর্যোদয়কে মায়ানরা সর্গ দর্শন বলেই মনে করতো। তাই তারা সূর্যেরো আরাধনা করতো।
তাদের মন্দিরে ব্যপক আয়োজনের সাথে পূজা পালন করা হতো। নিয়মের মধ্যে ছিল – বাধ্যতামূলক উপবাস, যৌনকর্ম হতে বিরত থাকা, গরম জলে স্নান ইত্যাদি। ধর্মমন্দিরে রাজা্-রানী আপন যৌনাঙ্গ অথবা নাসিকা হতে রক্ত উৎসর্গ করতেন। দেবদেবীর সন্তুষ্টির জন্য নানা প্রকার খাদ্য, পশু ও মানুষের হৃদপিন্ড উৎসর্গ করতো।



কৃষি:
শুরু থেকেই মায়ানরা ছিল কৃষি প্রধান। নিজেরাই নিজেদের খাদ্যের যোগান দিতো এবং প্রয়োজনে বিনিময় প্রথারো আশ্যয় নিতো। তারা ভুট্রা, সূর্যমুখী বীজ, তুলা ও অন্যান্য ফসল চাস করতো।

বর্তমানে মায়ানরা:
স্পেনিস আক্রমনের পর থেকেই মায়ানরা ধিরে ধিরে খ্রীষ্ট ধর্মে দিক্ষিত হতে থাকে। মায়ারা আজও আছে। দক্ষিণ মেক্সিাকোয়, গুয়েতেমালায় ও বেলিজে।


রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

সাতকাহন সাতকথা

সমরেশ বাবুর সাতকাহনের খোকন হতে ইচ্ছে করে খুব।
একদিন রাস্তায় তোর দামী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে-
জানতে চাইবো, আমাকে চিনতে পেরেছিস?
তুই বিব্রত ভঙ্গিতে, গাড়ি থেকে নেমে বলবি-
        “অপাঙক্তেয়র দল সব” চিনতে না পারার কারন তো নেই!
জানি আমি খোকন হলেও, সাতকাহনের দীপা তুই নোস্
আড়চোখে বুঝিয়ে দিবি তুই এখন উচ্চপদস্থ!
                  “তুই” সম্বোধনটায় ঠিক ভদ্রতা হচ্ছেনা।
                   তুই নিশ্চয়ই জানিস খোকনদের ভদ্র হতে নেই,
আমার মলিন চেহারা, মলিন শার্ট, মলিন দুনিয়া, মলিন ভবিষ্যত
মুহুর্তের জন্য তোকে বিরক্তিনগর থেকে ঘুরিয়ে আনলেও
                  তোর চেহারায় দাঁতচাপা ভাবটা ঠিক ভেসে উঠবে।
গাড়ির ভেতরে থাকা লোকটি জানতে চাইবে-
                        ওরা কারা? কি চায়?

রোদ্দুরে তোর চেহারায় উত্তাপ!
সেই উত্তাপ চেপে তুই বলবি- “পরিচিত মানুষ”
        জানি তুই বলবিনা, এর’চে বেশি কিছু...
        তুই বলবিনা তোর মনফরিঙের দিনে,
                        তোর বৃষ্টিফোঁটা দিনে,
                        তোর একলাএকা দিনে
                        তোর ভেজা বসন্ত দিনে
                        ছিলাম সুর-সঙ্গীতে, মগ্নপরিপাটে।
কিছুটা সময় পর গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষটি বলবে, তোমার আত্মীয় কেউ?
    তুই মুখ নিচু করে বলবি, আরে নাহ্! ও প্রতিবেশী।
এরপর ক্ষণিকের জন্য থেমে  থাকবি, তবুও বলবিনা কোনদিন আমি তোর বন্ধু ছিলাম...
হয়তো আমি ভাবগত ভাবে, ভদ্রতার চাদরে মোড়ানো প্যাকেটজাত নই-
উন্মুক্ত নগরীর উদ্বাস্তু কিছু...
তারপর তুই গাড়িতে উঠে বসবি। হাওয়া ছাড়িয়ে, রোদ দাপিয়ে চলে যাবি দূর-বহুদূর

আমি দাঁড়িয়ে রইবো খোকন হয়ে।
জানি তুই পিছু তাকাবি না কারণ তুই তো সাতকাহনের দীপা নোস্।

******************** 

কবি - সকাল রয়
ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন - "আমি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসি, বিশ্বাস করি, সম্মান দেই..."। 
ফেসবুক লিঙ্ক এখানে