রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১৭

ওরা

ওদের দুজনকে দেখলেই বুঝা যায়, মেড ফর ইচ আদার। হাত ধরাধরি করে সিঁড়ি দিয়ে উপড়ে উঠে আসছে। ফিসফিস করে কি যেন বলছে আর হেঁসে হেঁসে এ ওর গায়ে গিয়ে পরছে।

এই সন্ধ্যেবেলা একজোড়া যুবক যুবতী এমনি এমনি তো আর আসেনি এখানে। কিইবা করার আছে ওদের। এসব তো আর যেখানে সেখানে করার উপাই নেই। অগত্যা এই নির্মাণাধীন বিল্ডিংটাকেই বেঁছে নিতে হলো।

আকাশে পূর্ণিমা কিন্তু এখানে, এই বিল্ডিঙে কোন আলো নেই। বাইরে থেকে দেখলে মনে হয়, একটা বিশাল কাল অবয়ব দাঁড়িয়ে আছে। একটা বহুতল বাড়ির কঙ্কাল। ওদের অবশ্য এসব ভাবার সময় নেই। ইচ্ছেটা ওদের মধ্যে এখন খুব প্রগার।

ওরা যায়গা খুঁজছে। রুমগুলো এখনো তৈরি হয়নি। শুধু দেয়াল উঠেছে, না আছে জানালা, না আছে দরজা। একটা ঘর দেখে ওরা এগিয়ে গেল। হুম... এই ঘরটাই। পারফেক্ট। একদম পারফেক্ট দেখতে। যেমন শুনেছিলো ঠিক তেমনি।

ছেলেটা দেখতে বেশ নাদুসনুদুস, ফর্সা; টোকা দিলে যেন রক্ত জমে যাবে। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে মেঝেতে। গোঙাচ্ছে। ওরা দুজন এগিয়ে গেল ছেলেটার দিকে, তারপর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলো পরস্পর। মুচকি হাসল দুজনে।

দুজনের মুখের দুপাশ থেকে বেড়িয়ে এলো লম্বা দুটো দাঁত। ঝাঁপিয়ে পড়লো ওরা ছেলেটির উপর...

মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

একজন অন্যরকম লেখক

যেটা আপনি চাক্ষুষ দেখেননি, সেটার যথার্থ বর্ণনা আপনি দিতে পারবেন না। যদি রং চরিয়েও বলেন তাহলে হয় রং কম হয়ে যাবে নয়তো বেশি। এই ব্যাপারটা আমি গোঁড়াতেই বুঝেছিলাম, তাই যতক্ষণ কোনকিছু চাক্ষুষ না দেখছি লেখার প্রশ্নই ওঠে না।

ও (আমার স্ত্রী) বিছানার উপর, আমি বসে আছি ঘরের অন্য পাশে সোফার উপর। এখান থেকেও আমি ওর গায়ের সুগন্ধটা পাচ্ছি। কি এক তীব্র আকর্ষণ। চার বছর কেটে গেল তবুও কত মায়া। কি মিষ্টি মুখটা ওর, হরিণীর মতন চোখ, গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট, চুলগুলো যেন কালো মেঘ। ওর বুকে মুখ গুজে দিয়ে যে সুখ আমি অনুভব করি তা পৃথিবীর কোথাও আর পাবো না আমি জানি।

প্রায়ই চিন্তাটা মাথায় আসে, ওকে নিয়ে একটা প্রেমের কবিতা লিখি। হয়ে ওঠে না। রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার ছাড়া না আমি কিছু পড়ে স্বাদ পাই, না লিখে; লিখতে পারিও না অন্যকিছু। তবুও চেষ্টা করেছিলাম -

"এতো দেখি তবুও ইচ্ছে জাগে বারবার
তোমায় নিয়ে কবিতা লেখার ভাষা হয়নি যোগাড়"

যে থ্রিলারটা লিখছি তাতে একটা মেয়েকে কেন্দ্র করেই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে, রহস্য যখন অনেকটাই উন্মোচিত হয়ে আসছিলো তখন গল্পটাকে আরও একটু রুদ্ধশ্বাস করবার জন্যে মেয়েটাকে খুন করার একটা নতুন অংশ যোগ করেছি। তারপর... তারপর কি? তারপর যাই হোক, খুনের ঘটনাটা কিন্তু বেশ হয়েছে।

খুনি যে কিনা মেয়েটার পরিচিত, মেয়েটার সাথে তার সম্পর্কও ভালো; বাড়িতে আনাগোনাও আছে একদিন হঠাৎ মেয়ের বাড়িতে এসে হাজির। মেয়েতো অবাক, আবার ভাবল হয়তো কোন কিছু হয়েছে এখন বলতে চাইছে না। তাই খুব একটা চাপ দিলো না। তাকে গেস্টরুমে বসিয়ে সে চলে গেল রান্নাঘরে দুপুরের খাবার আয়োজন করতে।

দুপুরে দুজনে একসাথে খেলো, তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে মেয়েটি চলে গেলো তার রুমে আর খুনি গেস্টরুমে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। খুনি চুপিচুপি ঢুকল মেয়েটির রুমে। ঘুমিয়ে আছে, গাঢ় ঘুম। খুব ধীরে সে বেঁধে ফেললো মেয়েটির হাত আর পা। একটা পলিথিন ব্যাগ বের করল সে তার পকেট থেকে, পানির মত রংবিহীন পলিথিন। সেটার ভেতর ধীরে ধীরে মেয়েটির মাথাটা ঢুকাতে থাকলো। চোখ পর্যন্ত ঢুকাতেই মেয়েটির ঘুম ভেঙে গেল, দেরি করে ফেলেছে সে। খুনি এক টানে মাথার বাকী অংশটুকুও ঢুকিয়ে ফেললো ব্যাগের ভেতর। মেয়েটি হাত-পা ছোঁড়াছুড়ির ব্যর্থ চেষ্টা করল। খুনি পকেট থেকে একটা স্কচটেপ বের করে মেয়েটির মাথাটা একটু তুলে পেঁচিয়ে দিলো গলায়। ব্যস।

অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ছটফট করতে করতে মারা গেল মেয়েটি। সে বসে বসে দেখল আর একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে গেল। তারপর... লাশ লুকানোর পালা।

এই অংশটা নিয়ে আমাকে আরো ভাবতে হবে। অবশ্য সেজন্য বেশি সময় নেওয়া যাবে না, এক-দুই দিনের মধ্যেই ভাবতে হবে; তা না হলে আমার স্ত্রীর লাশ পচেই দুর্গন্ধ ছড়াবে।

মঙ্গলবার, ১০ জানুয়ারী, ২০১৭

লেখক খুন

ভোর হতে না হতেই ইন্সপেক্টরের ফোন। তার পরেই চলে এলাম এখানে। একজন লেখকের বাড়ি। খুব বড় লেখক নন। মোটামুটি ধরণের। এলোমেলো জীবনযাপন করতেন। বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। কাল রাতে খুন হয়েছেন। সকালে পত্রিকাঅলা পত্রিকা দিতে এসে দেখে দরজা খোলা, ভেতরে লাইট জ্বলছে, জানালা খোলা হয়নি। এমনটা কখনো দেখা যায়নি এবাড়িতে। তাই কৌতূহলবশত ভেতরে ঢোকে। তখনই দেখতে পায় লেখকের লাশ, পুলিশে খবর দেয়। তাকে অবশ্য ইন্সপেক্টর এখন বারান্দায় বসিয়ে রেখেছে।

এলাকাটা নিরিবিলি। উঁচু উঁচু বিল্ডিং এখানে কম। একতলা পাকা বাড়িটার চারদিকে দেয়াল। ভেতরে যাই ঘটুক বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। গেইটটা অবশ্য বাইরে থেকে খোলা যায় তবে ওটা দেখে মনে হচ্ছে খোলাই থেকে সবসময়।

পঞ্চাশ-ষাট বছরের পুরনো বাড়ি। দুটো বেডরুম, একটা অব্যবহৃত, একটা ড্রয়িং প্লাস ডাইনিং রুম, তার লাগোয়া কিচেন ও বাথরুম। দেখে বোঝা যায় এক-দুবার সংস্কার করে বর্তমান চেহারায় আনা হয়েছে। বাড়ির সামনে একটু যায়গাও আছে, আগাছা পূর্ণ।

লেখকের লাশটা বেডরুমেই উপুড় হয়ে পড়েছিল। ছুরি দিয়ে করা হয়েছে খুনটা। ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো মেঝের অনেকটা রক্ত পড়ে আছে, জমাট রক্ত।

ভাবছি খুনের মোটিভটা কি কি হতে পারে। হঠাৎ ইন্সপেক্টরের ডাকে ভাবনাটা ছুটে গেল - 'আলি ভাই।'
'বলুন।'
'লেখকের এক বন্ধু এসেছে। বাসা কাছেই। কথা বলবেন?'
'অবশ্যই, ডাকুন।'

ইন্সপেক্টরকে দেখে আমি মাঝে মাঝেই ভাবি এদেশের কেতাবি জ্ঞান দিয়ে আর যাই হোক অপরাধী বের করতে শেখা যায় না। হাঁদাগুলোর আবার ড্যাং ড্যাং করে প্রোমোশনও হয়!

কাঁদো কাঁদো চেহারার যাকে ইন্সপেক্টর নিয়ে এলো তাকে দেখে খুব সাধারনই বলা যায়, মাঝারি হাইট, মাঝারি স্বাস্থ্য; পরনে ফুলহাতা শার্ট, কাল প্যান্ট, পায়ে স্যান্ডেল। ইন্সপেক্টর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
'ইনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ আলি বেগ আর আলি ভাই ইনি লেখক সাহেবের বন্ধু ইমতিয়াজ আহমেদ, আপনারা কথা বলুন আমি ওদিকটা দেখে আসছি।'
মাথা নেড়ে ইন্সপেক্টরকে সায় দিলাম।
'আমি ভাবতেও পারিনি ওর বুকে কেউ ছুরি চালাতে পারে, ওকে খুন করতে পারে।' কাঁদতে কাঁদতে বললেন ইমতিয়াজ আহমেদ।
'খুনটা করলেন কেন?'
'জি?' অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে।
'সহজ হিসেব, খুনটা আপনি না করলে যানবেন কি করে যে ছুরি দিয়ে করা হয়েছে আর ছুরিটা বুকে মেরেছে না পেটে। পুলিশ তো কাওকে যানায়নি।'

রবিবার, ৮ জানুয়ারী, ২০১৭

মায়া সভ্যতা

মায়া’ পৃথীবির প্রাচীন সভ্যতা তথা ধর্ম সঙ্ককৃতির মধ্যে অন্যতম। যার সূচনাকাল খ্রিষ্টপূর্ব ২০০০ – ২৫০ অব্দ। এরা মেসোআমেরিকান একটি সভ্যতা। ‘মেসো’ গ্রিক শব্দ যার অর্থ মধ্য আর মেসোআমেরিকা বলতে বুঝায় মধ্য আমেরিকা মূলত মেক্সিকো। মেক্সিকান রাষ্ট্রগুলোর দক্ষিনে এবং বর্তমান গুয়াতেমালা, বেলিজ, এল সালভাডোর এবং পশ্চীমি হন্ডুরাসে এই সভ্যতা বিস্তার লাভ করে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ – ৯০০ অব্দ পর্যন্ত অনেক মায়া নগরীগুলো নানাদিক দিয়ে উন্নতি লাভ করে। ৯০০ শতক থেকেই এদের নগর সভ্যতা বিকাশ লাভ করে। উন্নতির শীর্ষে অবস্থানকালে মায়ানদের জনসংখ্যা ছিল প্রায় ২০ লাখ।এই সভ্যতাটি ছিল বিশ্বের সর্বাপেক্ষা ঘনবসতি এবং সাংস্কৃতিক ভাবে গতিশীল একটি সমাজ।


ভৌগলিক বিবরন:
মায়া অঞ্চলকে সাধারনভাবে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
১. দক্ষিন মায়া উচ্চভূমি: গুয়াতেমালা এবং চাপাস দক্ষিন মায়া উচ্চভূমির অন্তর্ভূক্ত,
২. দক্ষিন বা মধ্য মায় নিচুভূমি: মেক্সিকান রাষ্ট্রগুলো কাম্পেছ, কুইন্টানা রোও এবং উত্তর গুয়াতেমালা, বেলিজ এবং এল সালভাডোর দক্ষিন বা মধ্য মায়া নিচুভূমির অন্তর্ভুক্ত,
৩. উত্তর মায়া নিচুভূমি: ইয়ুকাটান উপদ্বীপ এবং পুউক পাহাড়গুলো উত্তর মায়া নিচুভুমির মধ্যে পড়ে।

ইতিহাস:
খ্রীষ্টপূর্ব ১০ম শতাব্দীর প্রথমদিক থেকে মায়া অঞ্চলে লোক বসবাস শুরু করেছিল। সূচনাটা মূলত গুয়াতেমালাতেই হয়েছিল। তারা শহর ভিত্তিক সাম্রাজ্য গঠন করে এবং বিস্তারও লাভ করেছিল। কৃষির দিক থেকেও এরা তীব্রভাবে বিকশিত ছিল। মায়নরা অন্যান্য মেসোআমেরিকান জাতিদের সাথে বাণিজ্যে অংশগ্রহন করতো। বাণিজ্যের প্রয়োজনে এরা মেক্সিকোর উপসাগরিয় কূল Tainos এর ক্যারিবীয় অঞ্চল পর্যন্তও যেত বলে জানা যায়। মায়ানরা কাকাও, লবণ, সাগর শেল, নানা ধরনের পাথর ও কাচের মত দেখতে কালো রঙের আগ্নেয় শিলার ব্যবসা করত।



৯ম শতকের দিকে মায়া কেন্দ্রগুলোর দক্ষিনের নিচু ভূমিগুলো বিশেষ করে গুয়েতেমালার মায়া নগরগুলি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। এর পেছনের কারণগুলোকে দুইভাগে বিভক্ত করা যায়।
১. প্রাকৃতিক কারন: অত্যাধিক জনসংখ্যা বৃদ্ধি, বিদেশী আক্রমন, কৃষকদের বিদ্রোহ এবং বানিজ্য পথের পরিবর্ন বা ভেঙেপড়া,
২. প্রাকৃতিক কারন: পরিবেশ সংক্রান্ত বিপর্যয়, সংক্রামক রোগ, এবং জলবায়ু পরিবর্তন।
ষোড়শ শতকে মায়নরা স্পেনিশদের দ্বারা আক্রন্ত হয়। তার পর থেকে প্রায় ১৭০ বছর নানা লড়াই আর সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে স্পেনিশদেরকে সস্পুর্ন মায়ান অঞ্চল নিয়ন্ত্রনে নিতে হয়েছে।

স্থাপত্য:
মায়ানদের স্থাপত্যের মধ্যে ছিল ধর্মিয় সৃতিসৌধ, মন্দির, বসতবাড়ী ইত্যাদি। বাড়ীগুলো মূলত শহরের বাইরেই বেশি হতো কারন মায়ানরা ছিল কৃষি নির্ভর। তারা পিরামিডের মতো দেখতে উপাসনাগৃহ ও উৎসবস্থল তৈরি করেছিল। এগুলো ছিল তাদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। মায়াদের ৪টি প্রধান কেন্দ্র ও অনেকগুলো ছোট ছোট কেন্দ্র ছিল। প্রধান কেন্দ্রগুলোর একেকটি থেকে দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ এলাকায় শাসনকার্য চালানো হত।



শিল্পকর্ম:
অনেকে গবেষক মনে করে থাকেন যে প্রাচীন যুগের শিল্প গুলোর মধ্যে মায়ানদের তৈরি শিল্পকর্গুলো সবচেয়ে সুন্দর। মায়ানদের শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে কারুকাজময় মন্দির, সৃতিসৌধ ও বাড়ীঘড়।কারুকাজের বিষয়বস্তু – গায়ক, নর্তকী, মায়ান মহিলারা, উৎসবে ধর্মযাজকরা, যুদ্ধ, মুখোস, দেবতা ইত্যাদি।



গনিত ও জ্যোর্তিশাত্র:
এই দুইটি বিষয়ে মায়ানদের জ্ঞন ছিল অভূতপূর্ব। গণিতে শূন্যের ব্যবহার, পজিশনাল নোটেশন নির্ধারণ করেছিল মায়ারা। তারা ২০ ভিত্তি সংখ্য ও ৫ ভিত্তি সংখ্যা পদ্ধতি ব্যবহার করতো। তারা বিশাল-বিশাল গাণিতিক হিসাব করতে পারতো। জ্যোর্তিশাস্ত্রে সৌর বৎসরের গননা, চন্দ্র ও শুক্র গ্রহের অবস্থান এমনকী সূর্যগ্রহনও আগেভাবে বলে দিতে পারত তারা!

সময়:
সময় নিয়ে মায়ানদের ভাবনা চিন্ত ছিল যথেষ্ট নির্ভুল ও নিয়মিত। অতীতের একটি অপরিবর্তনীয় বিন্দু থেকে মায়ার ইতিহাস গণনা করা হতো। যেমন-খ্রীষ্টান ধর্মের খেত্রে যিশুর জন্ম, গ্রিসের খেত্রে প্রথম অলিম্পিক ইত্যাদি। তাদের বর্ষ পঞ্জিকার একটি নির্দিষ্ট তারিখকে (৩১১৪ খ্রীষ্টপূর্বাব্দের) কেন্দ্র হিসেবে ধরে নিয়ে তারা সময়ের হিসেব করতো।

বর্ষপঞ্জিকা:
K’in হল মায়া বর্ষপঞ্জিকার একটি সময় যা একটি দিনের অনুরুপ, উইনাল হল মাস যা ২০ দিনে সম্পন্ন হতো আর ১৯ উইনালে হতো ১ হাব বা বছর যা ৩৬০ দিন বুঝায়। এর সাথে যুক্ত করা হয় ওয়েব নামক ৫ দিনের একটি মাস যাকে মায়ানরা খুব অমঙ্গলজনক মনে করতো। মায়ানদের মাসের নাসগুলো হচ্ছে -
১) Pop (মাদুর)
২) Wo (কাল যুক্তাক্ষর)
৩) Sip (লাল যুক্তাক্ষর)
৪) Sotz (বাদুড়)
৫) Sek (?)
৬) Xul (কুকুর)
৭) Yaxk’in (নতুন সূর্য)
৮) Mol (জল)
৯) Ch’en (কাল ঝড়)
১০) Yax (সবুজ ঝড়)
১১) Sak (সাদা ঝড়)
১২) Keh (লাল ঝড়)
১৩) Mak (পরিবেষ্টিত)
১৪) K’ank’in (হলদে সূর্য)
১৫) Muwan (পেঁচা)
১৬) Pax (গাছ লাগানোর সময়)
১৭) K’ayab (কচ্ছপ)
১৮ )Kumk’u (শস্যভান্ডার)
১৯) Wayeb (অমঙ্গলজনক ৫ দিন)

তাছাড়া মায়ানদের ধর্মভিত্তিক বর্ষপঞ্জিকাও (Tzalkin) ছিল। এতে ২০ দিনে হতো ১ মাস, ১৩ মাসে হতো ১ বছর, ৫২ বছরে হতো ১ শতাব্দী। প্রতি ৫২ বছর পর পর ধর্মমাসের এবং সাধারন মাসের একই নামের দিনটিতে মায়ানরা বিপুল আয়োজনে উৎসব পালন করতো তখন নরবলির মাত্রও বৃদ্ধি পেতো।

লিখনপদ্ধতি:
খ্রীষ্টপূর্ব ২০০-৩০০ শতাব্দীতে মায়ানরা লিখতে শুরু করে। তাদের প্রতিটি চিহ্য বা বর্ন এক একটি শব্দ বা অর্থের প্রকাশ করতো।
লিখার জন্য ময়ানরা ব্যবহার করতো পশুর চুল বা লোম দ্বারা তৈরি তুলী, পাখির পালক দ্বারা তৈরি কলম। মায়া সমাজের সবাই লিখতে পারতো না তাই লেখকদের একটা গুরুত্বপূর্ন অবস্থান ছিল।

ধর্ম:
মায়ারা একটি সময়ের চক্র প্রকৃতিতে বিশ্বাস করতো। মায়া ধর্মযাজকদের কাজ ছিল এই চক্রগুলি ব্যাখ্যা করা এবং তাদের সমস্ত বর্ষপঞ্জিকার সংখ্যার সম্পর্কে একটি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা।
ধর্মিয় বর্ষপঞ্জিকার শুরু হতো আইমিক্র (Imix) এক দানবের পুজার মাধ্যমে। দেবতাদের মধ্যে ছিল আইক (IK) নামের বায়ু দেবতা, চিচ্ছেন (Chicchans) নামের সর্প দেবতা। এছাড়াও তারা আরো নানা দেব-দেবীতে বিশ্বাস করতো।
মায়ানরা বিশ্বাস করতো ১৩ জন দেবদেবীর মধ্যে ৬ জন সূর্যকে উদীত করতো আর ৬ জন সূর্যকে নামিয়ে আনতো, ১ জন কিছু সময়ের জন্য সূর্যকে মধ্য গগনে ধরে রাখতো। পৃথীবির অন্তঃপুরে জিবালবা (Xibalba) নামক স্থানে মৃতরা বসবাস করতো। ৪ স্তরের সেই স্থানটি ছিল খুব কষ্টের যা পাহারা দিতো ৯ জন দেবদেবী। প্রতি রাতেই সূর্য জাগুয়ারের বেশে অন্ধকার সেই জগৎ অতিক্রম করতো আর চার স্তর অতিক্রম করার পর পূর্ব দিগন্তে উদিত হতো।
সূর্যোদয়কে মায়ানরা সর্গ দর্শন বলেই মনে করতো। তাই তারা সূর্যেরো আরাধনা করতো।
তাদের মন্দিরে ব্যপক আয়োজনের সাথে পূজা পালন করা হতো। নিয়মের মধ্যে ছিল – বাধ্যতামূলক উপবাস, যৌনকর্ম হতে বিরত থাকা, গরম জলে স্নান ইত্যাদি। ধর্মমন্দিরে রাজা্-রানী আপন যৌনাঙ্গ অথবা নাসিকা হতে রক্ত উৎসর্গ করতেন। দেবদেবীর সন্তুষ্টির জন্য নানা প্রকার খাদ্য, পশু ও মানুষের হৃদপিন্ড উৎসর্গ করতো।



কৃষি:
শুরু থেকেই মায়ানরা ছিল কৃষি প্রধান। নিজেরাই নিজেদের খাদ্যের যোগান দিতো এবং প্রয়োজনে বিনিময় প্রথারো আশ্যয় নিতো। তারা ভুট্রা, সূর্যমুখী বীজ, তুলা ও অন্যান্য ফসল চাস করতো।

বর্তমানে মায়ানরা:
স্পেনিস আক্রমনের পর থেকেই মায়ানরা ধিরে ধিরে খ্রীষ্ট ধর্মে দিক্ষিত হতে থাকে। মায়ারা আজও আছে। দক্ষিণ মেক্সিাকোয়, গুয়েতেমালায় ও বেলিজে।


রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

সাতকাহন সাতকথা

সমরেশ বাবুর সাতকাহনের খোকন হতে ইচ্ছে করে খুব।
একদিন রাস্তায় তোর দামী গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে-
জানতে চাইবো, আমাকে চিনতে পেরেছিস?
তুই বিব্রত ভঙ্গিতে, গাড়ি থেকে নেমে বলবি-
        “অপাঙক্তেয়র দল সব” চিনতে না পারার কারন তো নেই!
জানি আমি খোকন হলেও, সাতকাহনের দীপা তুই নোস্
আড়চোখে বুঝিয়ে দিবি তুই এখন উচ্চপদস্থ!
                  “তুই” সম্বোধনটায় ঠিক ভদ্রতা হচ্ছেনা।
                   তুই নিশ্চয়ই জানিস খোকনদের ভদ্র হতে নেই,
আমার মলিন চেহারা, মলিন শার্ট, মলিন দুনিয়া, মলিন ভবিষ্যত
মুহুর্তের জন্য তোকে বিরক্তিনগর থেকে ঘুরিয়ে আনলেও
                  তোর চেহারায় দাঁতচাপা ভাবটা ঠিক ভেসে উঠবে।
গাড়ির ভেতরে থাকা লোকটি জানতে চাইবে-
                        ওরা কারা? কি চায়?

রোদ্দুরে তোর চেহারায় উত্তাপ!
সেই উত্তাপ চেপে তুই বলবি- “পরিচিত মানুষ”
        জানি তুই বলবিনা, এর’চে বেশি কিছু...
        তুই বলবিনা তোর মনফরিঙের দিনে,
                        তোর বৃষ্টিফোঁটা দিনে,
                        তোর একলাএকা দিনে
                        তোর ভেজা বসন্ত দিনে
                        ছিলাম সুর-সঙ্গীতে, মগ্নপরিপাটে।
কিছুটা সময় পর গাড়ির ভেতরে থাকা মানুষটি বলবে, তোমার আত্মীয় কেউ?
    তুই মুখ নিচু করে বলবি, আরে নাহ্! ও প্রতিবেশী।
এরপর ক্ষণিকের জন্য থেমে  থাকবি, তবুও বলবিনা কোনদিন আমি তোর বন্ধু ছিলাম...
হয়তো আমি ভাবগত ভাবে, ভদ্রতার চাদরে মোড়ানো প্যাকেটজাত নই-
উন্মুক্ত নগরীর উদ্বাস্তু কিছু...
তারপর তুই গাড়িতে উঠে বসবি। হাওয়া ছাড়িয়ে, রোদ দাপিয়ে চলে যাবি দূর-বহুদূর

আমি দাঁড়িয়ে রইবো খোকন হয়ে।
জানি তুই পিছু তাকাবি না কারণ তুই তো সাতকাহনের দীপা নোস্।

******************** 

কবি - সকাল রয়
ফেসবুকে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন - "আমি সাধারণ মানুষকে ভালোবাসি, বিশ্বাস করি, সম্মান দেই..."। 
ফেসবুক লিঙ্ক এখানে