মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

বিবাহোত্তর কাব্য

শেষমেশ বিয়েটা করেই ফেলল ওরা, সেটাও দু’বছর আগের কথা। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক ছিল। সকল প্রেমই একটা পরিনতি চায় আর সেই পরিণতিটা হচ্ছে বিয়ে। কথায় আছে বিয়ে একশ কথা নিয়ে। ওদের বিয়েতেও তাই হয়েছিল। অনেকেই রাজি ছিলনা শুরুর দিকে। কিন্তু পাত্র-পাত্রী নিজেরাই যেহেতু উদ্যোগী হয়ে মাঠে নেমে পড়ল তাই নিমরাজি সদস্যদের আর করার কিছুই থাকল না। ভালোয় ভালোয় বিয়ের ব্যপারটা উতরেও গেল। এর মধ্যে দেখতে দেখতে দুটি বছরও কেটে গেছে।
সব ঠিকঠাকই চলছিল কিন্তু এদানিং পাত্রী মানে বর্তমানে যিনি স্ত্রী, তার বেশ অভিমান হতে দেখা যায়। তার অবশ্য বেশ জোড়াল কারণও আছে, বিয়ের আগে পাত্র মানে বর্তমানে যিনি বর, নিয়ম করে স্ত্রীর জন্যে কবিতা লিখত, সেগুলো আবার ফেসবুক মেসেঞ্জারে পাঠিয়েও দিত। প্রথম প্রপোজটাও কিন্তু কবিতা দিয়েই হয়েছিল। আমাদের গল্পের বর তার স্ত্রীকে লিখেছিল –
যদি অনুমতি দাও তবে কাছি আসি
বলতে চাই, ভালোবাসি, ভালোবাসি, ভালোবাসি…
আর আজকাল? কাব্য টাব্য সব শিকেয় উঠেছে। বরটি কিইবা করবে? এখন তো আর একা নয় যে প্রোমোশনের চিন্তা বাদ দিয়ে কোনরকমে চাকরীটা করবে আর সঙ্গিনীর জন্যে কবিতা লিখবে। এখন তাকে ভাবতে হয় ভবিষ্যতের কথা। তাই চাকরীটাও খুব সিরিয়াসলি করতে হয়। নিয়মিত বসকে তেল দিতে হয়। অন্য কলিগদের খুশী রাখতে হয়, যদিও ওদের টপকেই ওকে প্রোমোশন নিতে হবে! বাট কিছু করার নেই, এটাই লাইফ।
তো যাইহোক, এই অবস্থায় আর কবিতা কোথা থেকে আসে? তবুও স্ত্রীর বায়না বলে কথা। মেটাতে তো হবেই। তাই কথা দিল রাতে লিখে রাখবে, সকালে অফিসে যাওয়ার সময় কবিতা লেখা চিরকুটটা টেবিলে রেখে যাবে। ও বেরিয়া যাওয়ার পর যেন সেটা খুলে পড়ে নেয়।
সকালে বর বেড়িয়ে যাওয়ার পর দৌড়ে রিডিং টেবিলের সামনে চলে এল স্ত্রী। টেবিলে রাখা চিরকুটটি হাতে তুলে নিল। ভাজ খুলেই দেখতে পেল সেই পুরনো প্রিয় অক্ষরগুলোকে। অতীতের সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে ওর। হাসি হাসি মুখে পড়তে শুরু করল চিরকুটটি। তাতে লেখা –
তুমি আমার ময়না পাখি
তুমি আমার টিয়া
জনমের মত দিয়াছ আছোলা
করিয়া আমারে বিয়া
(বাকিটুকু ইতিহাস…)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন