মঙ্গলবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৭

একজন অন্যরকম লেখক

যেটা আপনি চাক্ষুষ দেখেননি, সেটার যথার্থ বর্ণনা আপনি দিতে পারবেন না। যদি রং চরিয়েও বলেন তাহলে হয় রং কম হয়ে যাবে নয়তো বেশি। এই ব্যাপারটা আমি গোঁড়াতেই বুঝেছিলাম, তাই যতক্ষণ কোনকিছু চাক্ষুষ না দেখছি লেখার প্রশ্নই ওঠে না।

ও (আমার স্ত্রী) বিছানার উপর, আমি বসে আছি ঘরের অন্য পাশে সোফার উপর। এখান থেকেও আমি ওর গায়ের সুগন্ধটা পাচ্ছি। কি এক তীব্র আকর্ষণ। চার বছর কেটে গেল তবুও কত মায়া। কি মিষ্টি মুখটা ওর, হরিণীর মতন চোখ, গোলাপের পাপড়ির মত ঠোঁট, চুলগুলো যেন কালো মেঘ। ওর বুকে মুখ গুজে দিয়ে যে সুখ আমি অনুভব করি তা পৃথিবীর কোথাও আর পাবো না আমি জানি।

প্রায়ই চিন্তাটা মাথায় আসে, ওকে নিয়ে একটা প্রেমের কবিতা লিখি। হয়ে ওঠে না। রুদ্ধশ্বাস থ্রিলার ছাড়া না আমি কিছু পড়ে স্বাদ পাই, না লিখে; লিখতে পারিও না অন্যকিছু। তবুও চেষ্টা করেছিলাম -

"এতো দেখি তবুও ইচ্ছে জাগে বারবার
তোমায় নিয়ে কবিতা লেখার ভাষা হয়নি যোগাড়"

যে থ্রিলারটা লিখছি তাতে একটা মেয়েকে কেন্দ্র করেই রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করে, রহস্য যখন অনেকটাই উন্মোচিত হয়ে আসছিলো তখন গল্পটাকে আরও একটু রুদ্ধশ্বাস করবার জন্যে মেয়েটাকে খুন করার একটা নতুন অংশ যোগ করেছি। তারপর... তারপর কি? তারপর যাই হোক, খুনের ঘটনাটা কিন্তু বেশ হয়েছে।

খুনি যে কিনা মেয়েটার পরিচিত, মেয়েটার সাথে তার সম্পর্কও ভালো; বাড়িতে আনাগোনাও আছে একদিন হঠাৎ মেয়ের বাড়িতে এসে হাজির। মেয়েতো অবাক, আবার ভাবল হয়তো কোন কিছু হয়েছে এখন বলতে চাইছে না। তাই খুব একটা চাপ দিলো না। তাকে গেস্টরুমে বসিয়ে সে চলে গেল রান্নাঘরে দুপুরের খাবার আয়োজন করতে।

দুপুরে দুজনে একসাথে খেলো, তারপর কিছুক্ষণ গল্প করে মেয়েটি চলে গেলো তার রুমে আর খুনি গেস্টরুমে। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। খুনি চুপিচুপি ঢুকল মেয়েটির রুমে। ঘুমিয়ে আছে, গাঢ় ঘুম। খুব ধীরে সে বেঁধে ফেললো মেয়েটির হাত আর পা। একটা পলিথিন ব্যাগ বের করল সে তার পকেট থেকে, পানির মত রংবিহীন পলিথিন। সেটার ভেতর ধীরে ধীরে মেয়েটির মাথাটা ঢুকাতে থাকলো। চোখ পর্যন্ত ঢুকাতেই মেয়েটির ঘুম ভেঙে গেল, দেরি করে ফেলেছে সে। খুনি এক টানে মাথার বাকী অংশটুকুও ঢুকিয়ে ফেললো ব্যাগের ভেতর। মেয়েটি হাত-পা ছোঁড়াছুড়ির ব্যর্থ চেষ্টা করল। খুনি পকেট থেকে একটা স্কচটেপ বের করে মেয়েটির মাথাটা একটু তুলে পেঁচিয়ে দিলো গলায়। ব্যস।

অনেকটা সময় নিয়ে ধীরে ধীরে ছটফট করতে করতে মারা গেল মেয়েটি। সে বসে বসে দেখল আর একের পর এক সিগারেট ধরিয়ে গেল। তারপর... লাশ লুকানোর পালা।

এই অংশটা নিয়ে আমাকে আরো ভাবতে হবে। অবশ্য সেজন্য বেশি সময় নেওয়া যাবে না, এক-দুই দিনের মধ্যেই ভাবতে হবে; তা না হলে আমার স্ত্রীর লাশ পচেই দুর্গন্ধ ছড়াবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন