শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

নীড়হারা

"ঘুম পাচ্ছে বাবা? এক্ষুনি বাসায় চলে যাব..." বলতে বলতে ছেলেকে কোলে নিয়ে শহীদ মিনারের গেইট থেকে বেরিয়ে গেল লোকটি। সেদিকে তাকিয়ে নিজের অবস্থানটা যেন আরেকবার বুঝতে পারলো মহিলাটি। মহিলা বলাটা ঠিক মানানসই হচ্ছে না আবার তাকে মেয়েও বলা যাচ্ছে না। সে আগে থেকেই জানতো, এখানে আজ জায়গা হবে না। তবুও এসেছিল।

শহীদ মিনার চত্বরের কৃষ্ণচূড়া গাছটার কাছাকাছি যে বেঞ্চটা আছে তাতে সে ঘুমায়, সাথে থাকে তার হামাগুড়ি দেওয়া ছেলেটা। বহুদিন হলো তারা এখানে ঘুমায়। বিশেষ বিশেষ দিনে যখন সবাই ছুটি পায় তখন তাদেরও ছুটি দেওয়া হয় সিমেন্টের তৈরি শক্ত বিছানাটিকে। কিন্তু ঘুম কি ছুটি নেয় কখনো? তাই তো ফিরে আসা। 

ছেলেটা বারবার ঘুমে ঢলে পড়ছে। অযথাই আর সময় নষ্ট করবে না বলে সিদ্ধান্ত নিলো সে। আজ রাতটা কাটানোর জন্য কোন একটা নিরিবিলি ফুটপাথ খুঁজে নিতে হবে।

সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ফুল

ও বুদ্ধিটা বের করেছে গত বছর। তাই কয়েকদিন আগে থেকেই তক্কে তক্কে ছিল। ফুল জোগাড় করবে বলে। খুব কঠিন হলো না কাজটা। কাছাকাছি একটা বাসা আছে, তার মালিকটা খুব ভালো। মাসে এক-দু বার ওকে দিয়ে বাসার সামনের অংশ আর বাগানটা পরিষ্কার করায়। যেদিন কাজটা করে দেয় সেদিন পেট ভরে খাওয়ায় আবার কটা টাকাও দেয়। টাকাটা পেলে ওর বেশ ভালোই হয়। ওর আর সেদিন কাগজ-প্লাস্টিকের বোতল এসব কুঁড়াতে হয় না। খেলেই সারাটা দিন কাটিয়ে দেয়। সেই বাসার মালিককে বলে ও কটা ফুল চেয়ে নিল। রাতে এগুলো নিয়েই যাবে।

রাত সাড়ে দশটা। ও দাঁড়িয়ে আছে শহীদমিনারে ঢোকার গেইটের উল্টো দিকে। কয়েকটা ফুল নিয়ে। আজ এগুলো বেচতে পারলে কালকের দিনটা একটু আরামে কাটবে। খেলার জন্য অনেকটা সময় পাবে।

হঠাৎ একটা পুলিশ ওকে দেখে খেঁকিয়ে উঠল - 'অই ফকিন্নির বাচ্চা এইখানে কি করস, যা এইহান থাইকা'। ও বুঝতে পারলো এখানে থাকা যাবে না, পুলিশ গরীবদের পছন্দ করে না আর ফুলগুলো বেচতে হলেও গেইটের কাছে যাওয়া দরকার। তাই রাস্তার উল্টো দিকে গেইটটা লক্ষ করে দৌড় লাগাল।

গাড়িটা জোর ব্রেক কষেও থামতে পারল না। গরীব বাচ্চাটা চাপা পড়ল দামী টায়ারের তলায়। হাত থেকে রাস্তায় ছিটকে পড়ল ফুলের তোড়া সাথে একটু খেলতে যাবার ইচ্ছে।

মাইকে গান বাজতে শুরু করল - আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো...

রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

ম্যাসেঞ্জার

কয়েক সেকেন্ড পরপর ম্যাসেজ আসছে।
- কি উত্তর দাও না কেন?
- এখন কথা বল না কেন?
- বল কথা, বল :(
- প্লিজ...
- কি গো :(

মোবাইলটা হাতে নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো লোকটি। কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। ওদিকে মেয়েটা উত্তরের জন্যে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে। মেয়েটার ম্যাসেজে এতক্ষণের রাগারাগির ঝাঁজটা আর নেই।
মধ্যবয়সী গুরুগম্ভীর লোকটির চোখদুটি ছলছল করে উঠলো। কি করে বলবে মেয়েটিকে যার উত্তরের জন্যে সে ব্যাস্ত হয়ে উঠেছে কয়েক মিনিট আগেই সেই ছেলেটি এক্সিডেন্টে মারা গেছে আর মোবাইলটা ছিটকে এসে পড়েছে তার পায়ের কাছে।

মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

টুথব্রাশের ইতিহাস

ছবি গুগল থেকে
দ্বিতীয়বার দাঁত পড়ে গেলে বা ফেলে দিলে আর উঠবে না এই ব্যপারটা আমি কোনদিন মেনে নিতে পারিনি। আফসোস। তাই অনেকের মতো দাঁত বাঁচনর চেষ্টা করি বা করতে হয়।

এই দাঁতের মূল্য মানুষ হাজার হাজার বছর আগে থেকেই বুঝতে শুরু করে। সে জন্যেই ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় হাজার-হাজার বছর আগে যাখন টুথব্রাশ আবিষ্কার হয়নি তখন দাঁত পরিষ্কার করতে মানুষ নানান ধরণের খিলাল, গাছের ডাল, মাছের কাঁটা ইত্যাদি ব্যবহার করেছে।
প্রথম গাছের ডাল ব্যবহার করতে দেখা যায় বেবিলনে, যীশু খ্রিষ্টের জন্মের ৩৫০০ বছর আগে। পশুর লোম দিয়ে প্রথম আধুনিক ব্রাশ বানায় চিন। সেও হাজার-বারশ বছর আগের কথা। তারপর ধীরে ধীরে জাপান ও ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ছড়াতে থাকে আর এর মানোন্নয়ন হতে থাকে। যানা যায় নেপোলিয়ন নাকি ঘোড়ার লোমের তৈরি টুথব্রাশ ব্যবহার করতেন। প্রথম যে বইটিতে টুথব্রাশ ব্যবহারের কথার উল্লেখ পাওয়া যায় সেটি হলো ব্রিটিশ পুরাতত্ত্ববিদ Anthony Wood এর আত্মজীবনীত (প্রকাশ কাল - ১৬৯০ ইং)। টুথপেস্টের ব্যবহার এসেছে আরও পরে।


একটা ঘটনা বলি, একবার আশরাফ আলী থানবী (র.) এর কাছে এসে এক লোক বলল - আমরা যখন জন্মাই তখন আমাদের মুখে দাড়ি থাকে না তাই আমার মতে ওগুলো রাখার প্রয়োজন নেই, কেটে ফেলা উচিৎ।

উত্তরে থানবী (র.) বলেন - আমরা মুখে দাঁত নিয়েও জন্মাই না তাহলে তো ওগুলোও ফেলে দেওয়া উচিৎ।
একটি দাঁত বিষয়ক জোকসঃ
এক লোক দাঁত তুলবে, গেছে ডাক্তারের কাছে। কিন্তু ভুল করে ঢুকে গেছে পাইলসের ডাক্তারের চেম্বারে।
ডাক্তার - উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ুন।
রোগী - এতো লম্বা রাস্তা দিয়ে দাঁত তুলবেন?

টিপসঃ মাসে অন্তত একবার টুথব্রাশ ভালমতো গরম পানি দিয়ে পরিষ্কার করা উচিৎ অথবা পরিবর্তন করা উচিৎ। তুলনামূলকভাবে নরম ব্রাশই দাঁতের জন্য ভালো।

শুভ ব্রাশিং :)

সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

প্রায়শ্চিত্ত

কত হলো বয়স? এ'বছর চৌষট্টি হবে বোধয়। এখন আর ওসব মনে থাকে না। মনে রেখেই বা কি লাভ? জীবনের সকল হিসেবেই যখন গড়মিল তখন বয়সের হিসেব করা অর্থহীন।
নদীর ধারে আসেননি বহুদিন। আজ অফিস না থাকায় চলে এলেন। অফিস বলতে কোচিং; একটা কোচিঙে অ্যাকাউন্টেন্ট হিসেবে চাকরী করেন তিনি।
সকালের এসময়টায় নদীর ধারে মানুষজন কম থাকে। ভালোই হয়েছে। তিনিও চাইছেন না এখন মানুষের মধ্যে থাকতে। একটু একা থাকতে চান। ভাবতে চান।

স্ত্রী সারাজীবন বিনা অভিযোগে পাশে থেকেছেন। ভালোমন্দ কত সময় গেছে, সব সময় মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেকসময় পারেননি অসুস্থতার কারনে। বেচারি সাড়া জীবন বিভিন্ন অসুখবিসুখেই কাটিয়ে দিল। কেনাকাটা খুব পছন্দ তার। একসময় যখন সংসারের অবস্থা ভালো ছিল তখন সপ্তাহে অন্তত দুবার যেতেন শপিঙে। আর এখন...কত বছর হয়ে গেল তেমন করে শপিঙে যান না। কখনো যদিও যান, তিনি খেয়াল করে দেখেছেন প্রয়োজনীয় জিনিসটার দোকানে ঢুকে কিনে চলে আসেন। শাড়ি, গয়না, জুতা, ক্রোকারিজের দোকানের দিকে পারতপক্ষে তাকান না, যেটুকু দেখেন তা আড়চোখে যেন তিনি বুঝতে না পারেন।

বড় ছেলেটা কিছুই করে উঠতে পারছেনা এখনো। কয়েকটা টিউশনি করে, ঐ দিয়েই চলে। কখনো চায় না কিছু। কিছু বলেও না। বাসায় থাকলেও বোঝা যায় না ও ঘড়ে আছে কি নেই। ছোটবেলায় কিন্তু ও এরকম ছিল না। অন্য বাচ্চাদের তুলনায় একটু চুপচাপ ছিল বটে কিন্তু অনেক প্রশ্ন করত। এটা কি, ওটা কি, এটা ওরকম কেন, সেটা ওরকম না কেন? উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে শেষে ধমক দিয়ে চুপ করাতে হতো। তাতে কিছুক্ষণ চুপ থাকতো তারপর আবার শুরু হয়ে যেত। সেই ছেলেটা এখন কথাই বলে না। শ্মশানের মতো শান্ত হয়ে গেছে।
লেখাপড়াটাও শেষ করতে পারল না। মাঝে সংসারের অবস্থা এত খারাও হয়ে গিয়েছিল যে ওকে লেখাপড়াটা ছেড়ে দিয়ে একটা দোকানে কাজ নিতে হলো। এখন টিউশনি করে চলছে। একটা ভালো চাকরীর চেষ্টা ও করছে কিন্তু তিনি কোন আশার আলো দেখছেন না কারণ ছেলেটা পর্যাপ্ত লেখাপড়ার সুযোগ পায়নি আর ঘুষ দেওয়ার সামর্থ্যও তার নেই।

তার মেয়েটা ছেলেটার থেকে পাঁচ বছরের ছোট। ভাইবোনে বেশ মিল ওদের। মেয়েটা একদিন হঠাৎ বলে দিল - 'লেখাপড়া করব না'। ছেলেটা বলেছিল করতে কিন্তু বেশি চাপ দেয়নি, হয়তো শেষ পর্যন্ত চালিয়ে নিয়ে যেতে না পারার ভয়ে। সেই থেকে ঘড়ে বসে আছে মেয়েটা। বিয়ের ব্যবস্থাও করে উঠতে পারছেন না অথচ মেয়ের বয়স তো থেমে নেই।

একটা সময় ছিল যখন তিনি প্রচুর রোজগার করতেন ব্যবসা করে। তখন ভাইদের অবস্থা বেশ খারাপ। আজ ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা যারযার মত করে গুছিয়ে নিয়েছে। বলতে গেলে সবার অবস্থাই বেশ ভালো। ওদের দুর্দিনে তিনি পাশে দাঁড়াননি। আসলে মাথায়ই আনেননি তাদের কথা। মাঝে মাঝে বাড়ীতে গেলে হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে আসতেন মাত্র। আজ যখন তার ছেলেমেয়েদের তার সামনে সদ্য জনাই কারা কোরবানির পশুর মত ছটফট করতে দেখেন তখন তিনি বুঝতে পারেন সেদিন তার ভাই আর তাদের ছেলেমেয়েদের কষ্ট।

ছোটবেলায় তিনি যে স্কুলে পড়তেন তার দেয়ালে নানান উক্তি লেখা থাকত। একটা উক্তি তার এখনো মনে আছে - 'মানুষকে তার পাপের শাস্তি কিছুটা হলেও জীবদ্দশায় ভোগ করতে হয়'।

রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাটার ভাইয়ের ইতিহাস

বাটার ভাইয়ের ইতিহাস
+++++++++++++++++
"ডিস্টাব করিস না, থাণ্ডার প্যারালাইজে আছি।" এটা বাটার ভাইয়ের কমন ডায়লগ। খুব চিন্তার মধ্যে থাকলে এটা সে বলবেই। তো এহেন বাটার ভাই কি করে বাটার ভাই হলেন সে এক ইতিহাস বটে।

আমরা তখন এসএসসি ডিঙিয়ে সবে কলেজ জীবন স্টার্ট করেছি। অল্প বয়সি দাড়িগোঁফ কেটে-ছেঁটে আজব সব স্টাইল করে আর শার্টের কলারটা উঁচু করে এলাকায় টহল দেই। বাটার ভাই তখন লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে নিয়মিত আমাদের সাথে পার্কে আড্ডা দেয়। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে তার বক্তব্য - "ওইসব বইটই আমার লাইগা লেখছে না"।

সে সময় একবার হোল কি, বাটার ভাইয়ের ব্যাপক ইচ্ছা হল ফর্সা হওয়ার। যে যা বলছে তাই করছে। ফর্সা তাকে হতেই হবে। কোত্থেকে যেন শুনে আসলো গায়ে বাটার/মাখন মেখে রোদে বসে থাকলে ফর্সা হওয়া যায়। ব্যস, আর কে আটকায়। একদিন দুপুরে হঠাৎ দেখা গেল বাটার ভাই বাসার ছাদে প্রায় দিগম্বর হয়ে গায়ে বাটার মেখে চিত হয়ে শুয়ে আছে। আশেপাশের বাড়ি থেকে যে লোকজন তাকে দেখে দাঁত ক্যালাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়ালই নাই।

তারপর থেকেই সবাই তাকে বাটার বলে ডাকতে শুরু করে আর সিনিয়ার হওয়ায় আমরা বলি বাটার ভাই।

আজকাল বাটার ভায়ের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। উদাস উদাস ভাব, খালি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

জিজ্ঞেস করলাম - "কি হয়েছে?"
"দিলডা পকিষ্টিক লাইট হইয়া গেছে রে।" বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
বুঝলাম হৃদয় ঘটিত ব্যপার। সবার সাথে আলোচনা করা দরকার।

বিকেলে সবাইকে সাথে নিয়ে বাটার বাইয়ের কাছে বসলাম। বাবু জিজ্ঞেস করলো - "ভাই কি হয়েছে? খুলে বলেন?"
"কার প্রেমে পড়েছেন?" - সৌরভের প্রশ্ন।
"নিপা, নিপায় আমার দিলডা লইয়া গেছে রে।" বাটার ভাই যাত্রার নায়কের মত করে উত্তরটা দিলেন।
"হুম" - সবাই একসাথে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা।
"ফোন নাম্বার লাগবে?" - চঞ্চল বলল। যে কোন মেয়ের নাম্বার যোগাড়ের বিষয়ে ও একজন এক্সপার্ট। সে নিজেকে লাভ গুরু দাবী করে, যদিও আজ অব্দি একটাও প্রেম করতে পারে নাই।
"আরে নারে, কথা হইছে।" বাটার ভাই একটু বিরক্ত হল।
"তাহলে আর সমস্যা কি?" আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
"কথা হইছে তয়..." এটুকু বলে একটু থামল।
"তবে কি?" চঞ্চল আগ্রহী হয়ে উঠলো।
"বলছে প্রেমও করবে তয়..."
"তবে কি?" এবার সবাই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
"তয়... সাদা সাহেবগ মতন ঠ্যাং গাইড়া প্রস্তাব দিতে কইছে।" বুঝলাম ইংরেজি কায়দায় হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রপোজ করতে বলেছে।
চঞ্চলের উৎসাহ এবার সবথেকে বেশি। আমাদেরও কিছু কম না। "আমি আপনাকে প্র্যাকটিস করাব, আমরা সবাই থাকব আপনার সাথে।" উপর- নিচ মাথা নাড়লাম আমরা সবাই।

এটাই বাটার ভাইয়ের প্রথম প্রেমে পড়া নয়, বছরে দু'তিন বার সে এরকম প্রেমে পড়ে! কিন্তু এইবারি প্রথম তাকে ইংরেজি কায়দায় প্রপোজ করতে হচ্ছে।

টানা দুদিন দিনে দুবেলা করে চলল প্র্যাকটিস। সে এক দেখার মত জিনিস। একবার ডান হাঁটুর যায়গায় বাম হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে ফেলছে, একবার মাফ চাওয়ার মত করে দুহাতে ফুল ধরছে কখনো আমাদের কাওকে দেখে বলছে - "তরে দেইখ্যা ভাব আইতাছে না", আর ইংরেজির কথা আর নাই বা বললাম।

যাইহোক, শেষমেশ দুদিন পর নিপা মানে আমাদের হবু ভাবির কাছে পাঠানো হল বাটার ভাইকে। পার্কের একটা কোনায় চলবে এই প্রপোজ পর্ব। আমরাও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি যেন কোন গণ্ডগোল হোলে সামলাতে পারি।

বাটার ভাই হাঁটু গেঁড়ে বসল, তারপর ডানহাতে একটা লাল গোলাপ উঁচু করে ধরে তাকাল তার হবু গার্লফ্রেন্ডের দিকে। বলল - "আই... লাভ ইউ... রিপা।"

"কি? রিপা কে?" - নিপা ভাবি রিতিমত চিৎকার করে প্রশ্নটা করলেন। এই প্রথম আমরা তার কথা শুনলাম। "তোমার আগের গার্লফ্রেন্ড?"

"হ" বাটার ভাইয়ের উত্তর। বাকিটা ইতিহাস!

শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

খেলনা

সেলিম মায়ের সাথে প্রতিদিনি আসে এবাড়িতে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে হাতমুখ ধুয়েই চলে আসে। মা ওকে ড্রয়িং রুমের কার্পেটের উপর বসিয়ে রেখে কাজ শুরু করে। অনুমতি ছাড়া ও যেতে পারে না কোথাও।
মা কাজ করে, ও বসে বসে দেখে। সকালে এসেই পুরো বাড়িটা ঝাড়ু দেয় তারপর চলে যায় রান্নাঘরে। রান্না-বান্না হলে সবার জন্য খাবার টেবিলে বেড়ে দেয়। সবাই যারযার মতন খেতে থাকে আর মা এবাড়ির বাচ্চাটা যে কিনা সেলিমের সমবয়সী তাকে খাইয়ে দেয়।
খাওয়া শেষ হলে ছেলেটাকে স্কুলের জন্য পোশাক পরিয়ে তৈরি করে দেয়। তারপর একে একে সবাই যখন চলে যায় তখন মা ওকে নিয়ে খেতে বসে রান্নাঘরে। খাওয়া শেষ করে মা শুরু করে বাড়ির আসবাবপত্র ঝাড়পোছের কাজ। ও বসে থাকে কার্পেটের উপর, কোথাও যাওয়ার অনুমতি নেই।
মাঝে মাঝে এবাড়ির গুরুগম্ভীর লোকটা দুপুরের আগেই বাড়ি চলে আসে তখন মা আগেভাগেই রান্না চাপিয়ে দেন। লোকটাকে দেখলেই ভয় লাগে। ওকে ভয় দেখাতেই যেন আজকেও দুপুরের আগেই চলে এসেছে।

এরকম সময় ও চাইলে বাড়িটা ঘুরে দেখতে পারে কিন্তু তা ও করবে না। ও চলে যাবে বাচ্চাটার রুমে। ওখানে অনেক খেলনা - বল, পুতুল, বন্দুক, গাড়ি আরও কত কি। ওঘর থেকে মায়ের হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। এখন এমন কোন খেলনা দিয়ে খেলা যাবে না যেটা শব্দ করে, তাহলে মা টের পেয়ে যাবে। নতুন নতুন খেলনা দিয়ে খেলতে দারুণ ভালো লাগে ওর। পুরনো বা নষ্ট হয়ে গেলে অবশ্য ওকে দিয়ে দেয় খেলনাগুলো কিন্তু তখন ওগুলো দিয়ে খেলতে অতটা ভালো লাগে না। বাবা থাকলে হয়তো ওকে দুয়েকটা নতুন খেলনা কিনে দিত। বাবাযে কোথায় চলে গেছে...
খেলনাগুলোয় হাত বুলাতে বুলাতেই অনেকটা সময় চলে গেল, ওকে এবার ড্রয়িং রুমে চলে যেতে হবে। পাশের রুমে মা আর ঐ লোকটার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

জাতক ও জাতকের গল্প

ছবি গুগল থেকে
ভারতের প্রাচীনতম গল্পসংগ্রহের নাম হল "জাতক", পালি ভাষায় "জাতকত্থ বন্ননা"। জাতক হল বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনির সঙ্কলন। অনেকের মতে 'জাতক' হল পৃথিবীর সমস্ত ছোট গল্পের উৎস। সিংহলি ভাষায় যে জাতক প্রচলিত আছে, বর্তমানের "জাতক" তারই অনুবাদ। সাহিত্যিক নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যাইয়ের মতে - "জাতকের গল্পগুলো ভারতের প্রাচীনতম সঙ্কলন, এদের কিছু কিছু কাহিনি বুদ্ধের জন্মের পূর্ব থেকেই চলিত, কতগুলি বুদ্ধের সমকালীন, কতগুলি বা পরবর্তী। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতক পর্যন্ত জাতককাহিনির নির্মিতিকাল বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।" এর গল্পগুলোর অনেকগুলিই কিছুটা পরিবর্তিত অবস্থায় পাওয়া যায় 'আরব্য উপন্যাস'এ।

একটি জাতকের গল্পঃ
পূর্বজন্মে বুদ্ধ একবার পাখিদের রাজা হয়ে জন্মেছিলেন। সে সময় তার দলের পাখিরা দূর দূরান্তে যেত খাবার খেতে। কিন্তু কাছেই একটা রাস্তা ছিল যার উপর দিয়ে প্রায়ই শস্যবোঝাই গাড়ি যেত। যাওয়ার সময় গাড়ি থেকে শস্যদানা পড়তো রাস্তায় কিন্তু পাখিরা এসব খেত না ভয়ে। তাদের ভয় দেখাত দলেরই একটি পাখি, সবাই তাকে ডাকত - অনুশাসিকা। এই নামে ডাকার কারণ, তার অনুশাসনের কারনেই কেউ রাস্তায় যেত না। সে সবাইকে বলতো - 'রাস্তায় যেও না, যে কোন সময় গাড়ির চাকার নিচে পড়তে পার।' কিন্তু সে নিজে সবার আড়ালে রাস্তায় গিয়েই খাবার খেত। সবাই এলে যদি তার খাবার কমে যায় তাই সে সবাইকে এভাবে ভয় দেখাত।
একদিন হলো কি, তার খাবার সময় একটা গাড়ি এসে হাজির। সে এতোই খুঁটে খুঁটে রাস্তা থেকে খাবার খাচ্ছে যে গাড়িটার দ্রুত গতির কথাটা ভাবলই না। শেষমেশ গাড়িটা তার উপর দিয়েই গেল। মারাগেল অনুশাসিকা।

এই জাতকের শিক্ষা : নিজে সাবধান না হযে অন্যকে সাবধান করা কোন কাজের কথা নয়।

বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

সরস্বতী কথন

রাজা রাভি বার্মার আঁকা সরস্বতী
সরস্বতী জ্ঞান, সঙ্গীত ও শিল্পকলার হিন্দু দেবী। ঋগ্বেদে তিনি বৈদিক সরস্বতী নদীর অভিন্ন এক রূপ। তিনি হিন্দু সৃষ্টিদেবতা ব্রহ্মার পত্নী এবং লক্ষ্মী ও পার্বতীর সঙ্গে একযোগে ত্রিদেবী নামে পরিচিতা। উল্লেখ্য এই ত্রিদেবী যথাক্রমে ত্রিমূর্তি সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা বিষ্ণু ও সংহারকর্তা শিবের পত্নী। হিন্দুদের বিশ্বাস, সরস্বতী প্রাচীনতম হিন্দু ধর্মগ্রন্থ বেদ প্রসব করেন। হিন্দুধর্ম ছাড়াও খ্রিস্টীয় চতুর্থ-পঞ্চম শতকে রচিত মহাযান বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ মহাযান সূত্র-এও সরস্বতীর উল্লেখ পাওয়া যায়।
ধ্যান বা স্তোত্রবন্দনায় উল্লেখ না থাকলেও সরস্বতী ক্ষেত্রভেদে দ্বিভূজা অথবা চতুর্ভূজা এবং মরাল(রাজহাঁস)বাহনা অথবা ময়ূরবাহনা। উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে সাধারণত ময়ূরবাহনা চতুর্ভূজা সরস্বতী পূজিত হন। ইনি অক্ষমালা, কমণ্ডলু, বীণা ও বেদপুস্তকধারিণী। বাংলা তথা পূর্বভারতে সরস্বতী দ্বিভূজা ও রাজহংসের পৃষ্ঠে আসীনা।
পরিশেষে একটা বস্তাপচা কৌতুকঃ
বাবা ছেলেকে সরস্বতী দেবীর মূর্তি দেখিয়ে বলছেন - বাবু ঠাকুর প্রণাম কর, ইনি তোমায় জ্ঞান দেবেন।
ছেলে - তাহলে পায়ের কছে সবসময় বসে থাকা পুরুতমশাইয়ের এই অবস্থা কেন? তার তো নাসায় থাকার কথা।