মঙ্গলবার, ২৪ জুন, ২০১৪

অতুলের গল্প(১) ~ জয়ন্ত ব্রহ্ম

দিনটা শুরু হয়েছিলো অন্য আর দিন গুলোর মতই। তবে কেন জানি আজ বাতাসে একটু গুমোট ভাব। ভেজা ভেজা, আদ্রতায় ভর্তি। শ্বাস নিতে একটু কষ্ট হয়। আকাশটা মেঘ পূর্ণ, চার দিকে বৃষ্টির আভাস। যে কোন সময় মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে যেতে পারে। তবে তা অবশ্য মানুষের দৈনন্দিন  কাজের কোন ব্যাঘাত তৈরী করতে পারলো না। ব্যস্ত রাস্তা, সার-সার গাড়ী ছুটে চলেছে, ফুটপাত গুলোও ব্যস্ত মানুষের পায়ের চাপে আরেকটু যেন মাটির ভেতরে সেধিঁয়ে গিয়েছে।সবাই খুব ব্যস্ত।হকারগুলোও আজ কাষ্টমার ধরার প্রতিযোগিতায় একটু বেশি  পর।  তার জন্য নিজেদের মধ্যে গালা-গালী থেকে শুরু করে হাতা-হাতি পর্যন্ত যেতে পিছপা হচ্ছে না, আবার মিল হতেও সময়ের ব্যপার মাত্র। কারণ আর যাই হোক তারাতো সবাই একই পেশায়, তারা সবাই হকার। বোকা কাষ্টমার গুলোকে আরো বেশি করে বোকা বানানোর জন্য  তাদের এক জনের অপর জনের সাহায্য লাগবেই।  এইতো তাদেরই একজন তার সাগরেদকে নিয়ে  দেখানো মারপিটের অভিনয় করে একজন কাষ্টমারের কাছে দুনম্বর জিনিষ একনম্বর বলে বেশি দামে বেচে দিয়ে অপেক্ষা করছে  কাষ্টমারের চলে যাওয়ার।  তারপর তারা একসাথে আয়েশ করে চা আর সিগারেট খাবে।  অন্য দিনের চেয়ে আজ সকাল সকালই বেশ বড় একটা দাও মারা হয়ে গিয়েছে তার। রাস্তার অন্য পাশে একটি ছেলে প্রতিদিনকার মত আজও একটি  গোলাপ হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে  একটি মেয়ের জন্য। যদিও মেয়েটি আজ পর্যন্ত এক দিনের জন্যও তাকে পাত্তা দেয়নি। প্রতিদিনই গোলাপটি হাতে নিয়ে রাস্তায় ছুড়ে ফেলে নিজের রাস্তা মেপেছে। তবুও ছেলেটি তার আসা ছারতে পারেনা  মেয়েটিকে খুব ভালো লাগে বলে। তার দৃড় বিশ্বাস একদিন অবশ্যই মেয়েটির মন নরম হবে  আর হয়তো তাকে এড়িয়ে যাবে না। তাইতো আজও একতোড়া গোলাপ হাতে নিয়ে অপেক্ষা করছে  কখন মেয়েটি এ পথ ধরে আসবে আর বরাবরের মত আজকেও নিজের একতরফা প্রেম নিবেদন করবে । রাস্তায় হঠা শোনাগেলো  সেই অন্ধ ভিকারিটির ব্যাথা মিশ্রীত আহব্বান “ অন্ধের দিনের বাবারা, একটা দশপাই দিবাইন?! অন্ধটার খাইবার লাইগ্যা?!”।  তবে দশপাইয়ের দিন যে আর নেই তা যেমন ভিকারিটি জানে তেমনি জনসাধারনও জানে।
  দশপাইতো দুরের কথা একশো পয়শাতেও আজকাল কোন খাবার পাওয়া যায়না। দশপাইয়ের কথাটা বলা হয় আসলে মানুষের সিমপ্যাতী আদায়ের জন্য আর তাতে সে সফলও হয় মাঝে মাঝেই মানুষ একটাকা দুইটাকা থেকে শুরু করে  দশটাকা এমনকি ভাগ্য সহায় থাকলে বিশ টাকাও দান করে আর এতে তার দৈনিক ইনকাম গিয়ে হাজার টাকার উপরে গিয়ে দাড়ায়। বরাবরের মত আজকেও  রাস্তার এক পাশে রিক্সা ভির করে আছে বটে তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় আজকের এই বৃষ্টি ভেজা সকালে যাত্রী পাওয়া টা কষ্টকর।  অটোরিক্সা আর সিএনজির জন্য এমনিতেই মানুষ আর আগের মত রিক্সায় উঠতে চায়না। তার উপর আবার বৃষ্টি। তারপরও তাদের ক্লান্ত চোখ বারবার যাত্রী খোঁজায় ব্যস্ত থাকে। পাশের একটা গলি দিয়ে “নিনু ম্যাডাম”কে সাজগোজ করে বেড়িয়ে আসতে দেখা গেলো। সবসময় সাজগোজ করে থাকেন বলেই মহিলাকে তার আসল বয়সের চেয়ে অনেক কম মনে হয়। দুই বাচ্চার মা তিনি, বাচ্চারা স্কুলে পড়ে। হাসব্যান্ড বড় চাকুরি করেন। তবে কোন কারনে মহিলার সাথে তার হাসব্যান্ডের বনিবনা হত না। তাই এক পর্যায়ে ডিভোর্স হয় ওনাদের। নিনু ম্যাডাম এখন তার বাচ্চাদের নিয়ে একাই থাকেন। এলাকার লোকজনের ধারনা মহিলার অন্য কারও সাথে সম্পর্ক আছে। তাই স্বামীর সাথে ছাড়া-ছাড়ী। আজও সাজগোজ করে কোথায়  যাচ্ছেন কে জানে!
 
ছোট একটা দির্ঘ্য শ্বাস বেরিয়ে এল অতুলের গলা দিয়ে। এগুলো তার নিত্তি দিনের দেখা একই ঘটনা যার বলতে গেলে কোন রকম পরিবর্তনই হয়না। অতুলের বয়েস এখন আঠারো। এ সময়টা তার ওর সমবয়েসি অন্যান্যদের মত ব্যস্ততার মাঝে কাটানোর কথা, বন্ধুদের সাথে মন খুলে আড্ডাদেয়ার কথা।  কিন্তু তার সাথে তা হয়ে উঠেনি। অল্পবয়েসেই পাড়ার এডিক্ট ছেলেদের সাথে মিশে সে নিজেও পরিনত হয়ে ছিলো এডিক্টএ।ওর বাবা মিঃ হাসেম শেষ চেষ্টা হিসাবে রিহ্যাবেও দিয়েছিলেন কিন্তু তাতে লাভ হয়নি কিছুই। রিহ্যাব থেকে বেড় হওয়ার অল্প কিছুদিন পর আবার সে নেশার জগতে নিজেকে হাড়িয়ে ফেলে।নেশার পরিমানও বেড়ে যায় আগের চেয়ে অনেক বেশি। তাই মিঃ হাসেম তাকে এখন ছাদের চিলে কোঠায় বন্দি করে রাখেন শুধু খাবার সময় হলে নিচে নামতে দেন। তাই অতুলের সমস্ত দুনিয়াটা এখন ছাদের মধ্যেই সীমা বদ্ধ।নেশার এই ভয়াল জগৎ থেকে অতুল নিজেও ফিরে আসতে চেয়েছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারেনি। আর এখন তার এই বন্দি জীবনের এক মাত্র সঙ্গিই হচ্ছে নেশা। আবার একটা দির্ঘ শ্বাস ফেলল অতুল।  

সোমবার, ২৩ জুন, ২০১৪

এক কাপ চা (জেন গল্প) ~ আরাফ করিম

Zen Buddhism-এর প্রতীক
বোধিধর্ম’ নামে একজন ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্ম সন্ন্যাসী ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে পঞ্চম শতাব্দীর গোড়ার দিকে চিনে গিয়েছিলেন । চিনে তখন তাও ধর্মের প্রচলন থাকলেও অনেক চিনারাই এই ধর্মকে গ্রহণ করেন ।
‘ধ্যান’ বৌদ্ধ ধর্মে অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন । তো এই ভারতীয় শব্দ ‘ধ্যান’ চিনে গিয়ে হয় Chán । অস্টম শতাব্দীর শুরুর দিকে Chán এর ধারনা পৌছায় জাপানে । Chán এর জাপানি সঙ্করণ হল Zen । সার্বজনিন ভাবে বলা হয় Zen Buddhism
এই Zen Buddhism-এর সন্ন্যাসীদের নিয়ে অনেক শিক্ষামূলক গল্প প্রচলিত আছে । এসব গল্পকে বলা হয় জেন গল্প ।বহুল প্রচলিত একটি জেন গল্প-

এক কাপ চা
Nan-in (১৮৬৮-১৯১২), জাপানের একজন জেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী । একবার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তার কাছে এলো জেন বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে জানতে ।
Nan-in অধ্যাপককে চা দিয়ে আপ্যায়ীত করার জন্যে তার সামনে একটি কাপ রাখলেন এবং তাতে চা ঢালতে থাকলেন । পেয়ালাটি ভরে যাওয়ার পরেও তিনি চা ঢ়ালতেই থাকলেন ।

অধ্যাপক যখন দেখলেন Nan-in থামছেন না তখন তিনি বলে উঠলেন – “এটা সম্পুর্ণ ভরে গেছে, আর তো জায়গা নেই” ।
“এই কাপটির মতই” Nan-in বললেন “আপনিও আপনার ও মতামত ধারনায় পূর্ণ হয়ে আছেন । খালি না হওয়া অব্দি আমি আপনাকে কি করে জেন সম্পর্কে ধারনা দিই ?”