সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

চাকুরী জীবনের অভিজ্ঞতা ~ জয়ন্ত ব্রহ্ম

চাকুরী জীবনে না জানি আর কত কিছুরই মোকাবেলা করতে হবে গত কাল থেকে শুধু তাই  ভেবে যাচ্ছি। সরকারী চাকুরী তাই যে কোন সময় বদলীর অর্ডার আসতে পারে। গত কাল আমার টাংগাইল সখি পুর থেকে ময়মনসিংহ গৌরিপুরে বদলীর অর্ডার এসেছে জয়েন করার কথা ছিলো আজকে কিন্তু করিনি কারন কাল লম্বা আর একটি রোমাঞ্চ কর জার্নির পর আজ আর শরীরে বিশেষ কিছু ছিলো না।  গতকাল আমার বদলীর অর্ডার হওয়ার কথা, তাই সকাল সকালই সমস্ত কিছু গুছিয়ে নিয়ে বসে আছি কখন আমাদের চিফ স্যার আসবেন আর আমি সাইন টাইন করিয়ে নিয়ে কত তাড়াতাড়ি সখিপুর থেকে ভাগবো। কারণ আমাদের সখিপুর এমনিতেই পাহারী এবং বুনো অঞ্চল  শুধু পৌরসভার ভেতরেই সমান্য সভ্যতার আলো দেখা যায় আর পৌরভার বাইরের দিকে যত ভেতরে যাওয়া যায় শুধুই লাল মাটির উচুঁ নিচু টিলা আর ঘন জঙ্গল। বিদ্যুৎ যদিও আছে কিন্তু তাও থাকে কি থাকে না। তাছাড়া এমনও দেখেছি যে এক বাড়ি থেকে অন্য বাড়ির দূরত্ব প্রায় এক মাইল আবার এমনও দেখেছি যে ঘন জঙ্গলের ভেতর উচুঁ টিলার উপর টিনের চালের এক অংশ দেখে বোঝা যায় যে ওখানে মানুষ আছে। যাই হোক আমার ভাগতে চাওয়ার কারনটা আশাকরি পরিষ্কার। যাই হোক আমাদের চিফ স্যার এলেন সন্ধ্যা ৭:৩০ মিনিটে। তাও অফিসে আসেননি অগত্যা আমাকেই তারঁ বাসায় হানা দিতে হলো। পেপারের কাজও শেষ করলাম তখন প্রায়  ৮:০০ বাজে। কি আর করা চিন্তা করলাম রাতেই রওনা হয়ে যাই। আমাদের আশা যাওয়া করতে হতো ভালুকা সিড ষ্টোর দিয়ে। ভাবলাম সিড ষ্টোর পর্যন্ত আসতে পারলে ঢাকা-শেরপুরের বাস ধরে ময়মনসিংহ আসতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না। এদিকে সিড ষ্টোর থেকে সখিপুর আসার সোজা রাস্তাটি বন্ধ তাই প্রায় ২৬ কিলো ঘুর পথ পেরিয়ে সিড ষ্টোর আসতে হবে তাও পাত্তা দিলাম না। সিএনজি স্টেশনে আসলাম, দেখি সিএনজি মাত্র কয়েকটা তাও আবার কয়েক জনের ভাব ভঙ্গি বিশেষ সুবিধে নয়। কারন এখানে ঠেক বাজি থেকে খুনখারাপি পর্যন্ত সব কিছুর সাথেই এরা জড়িত তাই কে ভালো আর কে খারাপ তা বলা শক্ত। আবার সিড ষ্টোর গামি যাত্রী আমরা মাত্র চারজন এদিকে কোন গাড়িই যেতে চাচ্ছেনা। বুঝলাম ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। যাত্রাটা বিশেষ সুবিধের হবে না। শেষে না পেরে ডাবল ভাড়ায় বাটার জোড়নামক জায়গা পর্যন্ত একটা অটো ঠিক করলাম। এত কিছু করে যখন আমরা সখি পুর ছাড়লাম তখন রাত ১০:০০টা। চারদিক শুনশান নিরব। ঘন জঙ্গলের বুক চিরে বেড়িয়ে যাওয়া সরু পাকা রাস্তা ধরে আমরা এগিয়ে চলছি। মানষ জনের কোন চিহ্ন পর্যন্ত নেই। দেখলাম  ড্রাইভারও একটু একটু ভয় পাচ্ছে। যখন তখন ডাকাতি হওয়ার সমুহ সম্ভাবনা। আমরা ভরসা দিয়ে বললাম যে সামনে যাই পরুক গাড়ি যেন না থামায়। কারন জানি যে বাটার জোড় পর্যন্ত একবার চলে যেতে পারলে আর কোন ভয় নেই। যাই হোক তবে সমস্যা আর হলো না তবে একবার ভয় পেয়ে ছিলাম কারন সামনে পেছনে দুটো মটরসাইকেল পরেছিলো বলে কারন এভাবে সামনে পেছনে মটরসাইকেল ফেলে গাড়ি আটকিয়ে ডাকাতি করা প্রায় হরহামেসাই ঘটে এদিকে। তবে আমরা কোন সমস্যায় পড়লাম না। এভাবে বাকি পথটাও পারি দিয়ে সিডষ্টোর এসে বাস ধরলাম ময়মনসিংহের। তবে এ জার্নির কথাটা আমার অনেক দিন মনে থাকবে। অনেক কিছুই গুছিয়ে বলতে পারলাম না বলা সম্ভবও নয় শুধু সমান্য অনুভুতিটুকু প্রকাশ করা যায়। আমিও তাই সামান্য চেষ্টা করলাম আরকি।  

বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্যাঁচাল-১ ~ আরাফ করিম

রাত তিনটা। এখনো জেগে আছি। ঘুম যে একেবারে আসছে না তা নয়। মাঝেমাঝেই এমন হয়, ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না। কি যে জ্বালা। নাঘুমানোর প্রেকটিস আমার ইসকুলবেলা থেকে। খালি মনে হতো ঘুমালেই লস। আমার ঘর, ঘরের জিনিসপত্র, আমার বইগুলো(পাঠ্যবই বাদে), টিকটিকি, কিছুই দেখতে পাবো না ঘুমালে। মাধে মাধে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতান; রাতের আকাশ, হঠাৎ একটা রিক্সা বা গাড়ী বাসার সামনে দিয়ে চলে যাওয়া, জোঁনাকি, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, খুঁচড়া পথচারিদের টুকটুক কথা কিম্বা গান-এসব কিছুই শোনা হবে না দেখা হবে না ঘুমালে। আর যদি ঘুমের মধ্যে মরে যাই তাহলে তো কেল্লা ফতে!
একবার সখ করে বেড়ালের বাচ্চা এনেছিলাম পুষবো বলে। রাতে উঠে উঠে দেখতাম ওটাকে। যতবার উঠতাম ততবার দেখতাম জেগে আছে। মনে হতো ইনসোমনিয়ার রুগী। অবশ্য দু-তিন দিনেই ওটার উপর বিভিন্ন কারনে বিরক্ত হয়ে কাকে যেন দান করে দিয়েছিলাম।আমি কি মহৎ তাই না!
জীবনে প্রথম যে নারীর কথা রাত জেগে ভেবেছিলাম সে হল ‘মন্টেজুমার মেয়ে’। স্যার হেনরী রাইডার হেগার্ডের লেখা রোমঞ্চপন্যাসের এক চরিত্র। আহা, সে এক পুর্ন নারীই বটে। বইটার বিজ্ঞাপন দেখি এক পত্রিকায়। স্কুল থেকে ফেরার সময় কিনে ফেলি।বাসায় এসেই আর কোনো কথা নেই। কাপড় না পল্টেই বসে যাই বই নিয়ে। খাওয়া নেই দাওয়া নেই. হাত-মুখ ধোয় নেই। চুপচাপ পড়ছি তো পড়ছিই। একটানে পড়ে শেষ করলাম। উঠে দেখি সন্ধ্যা।কিসের সন্ধ্যা কিসের রাত আর কিসের কি, আমার তো ঘোরই কাটছে না। সত্যি বলতে আজো কাটেনি। এখনো চোখ বন্ধ করলে যেন দেখতে পাই। যাইহোক, সে প্রেম তো চিন্তার জগৎ ছাড়া আর কোথাও গড়াগড়ি খেলো না। তাই সে মনের কোনেই বসে থাক।
আচ্ছা রাতের বেলা তো নানান ধরনের পার্টি হয়, ক্লাবে, বাসায়, হোটেলে। তা আমি ভাবি, এরা যায় কখন, আনন্দ-ফুর্তি করে কখন, খায় কখন, বাড়ী ফেরে কখন, ঘুমায় কখন আর সকালে উঠে কাজেই বা যায় কিভাবে? আজিব ব্যপার!
রাত জেগে কত তিন গোয়েন্দা যে পড়েছি তার হিসেব কে রাখে। রাত জেগে পড়তাম, পাঠ্য বইয়ের মধ্যে ভরে লুকিয়ে পড়তাম। মাধে মধ্যেই ধরা পড়তাম মা অথবা বাবার কাছে। মার খাইনি তবে বকুনি খেয়েছি, বাবা অবশ্য খুব বেশি বকতেন না। ওই আসকারাতেই কিশোর পাশার ভূত ঘাড়ে চাপলো। কত চিমটি যে কাটলাম নিচের ঠোটে কিন্তু কিশোর পাশা আর হোতে পারলাম কোই?
যাক, রাত জেগে হুদাই প্যাঁচাল অনেক হলো। এবার থামি নোইলে রাতের যেটুকু বাকি আছে তাও যাবে। একটু ঘুমিয়ে নিই, সকালে উঠেই আবার যন্ত্র হতে হবে।

মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

প্রাণ ও কমিক্স ~ আরাফ করিম

 প্রাণ, যাকে ভারতের ওয়াল্ট ডিজনী বলা যেতে পারে।গত ৫ আগস্ট তিনি মারা গেলেন।সত্যিই খবরটা পেয়ে খুব খারাপ লেগেছিলো।তাঁর সৃষ্টি করা কমিক্স’এর চরিত্রগুলোর কারনে অনেকখানি রঙীন চিলো আমার ছোটবেলা।
ছোটবেলায় টিভিতে কার্টুনের এত রমরমা ছিলো না, কার্টুন চ্যানেলের কথা তো মাথাতেও আসেনি।ছোটদের উপযোগী সিনেমাও দেখোনো হতো কম বিটিভিতে।তখন ওই বিটিভিই ভরসা।ডিসের বাহারী চ্যানেলগুলো এসেছে আরো কিছুটা সময় পরে। সে সময় আমাদের একটা বড় বিনোদন ছিলো কমিক্স। বই পড়তে ভালোবাসতাম, তাই কমিক্স।পরিচয় হয় চাচা চৌধুরীর সাথে। প্রচন্ড বুদ্ধিমান ছোটখাট গড়নের এক বয়স্ক ভদ্রলোক, মাথায় পাগড়ী পরা।এহেন চেহারার একটা লোক যে রিতিমত হিরো বনে যেতে পারে তা ভাবতেই পারিনি।বড় হয়ে তার মত বুদ্ধিমান হতে চাইতাম।
অসম্ভব রকম লম্বা মানুষের মতন দেখতে ন্যাড়া মাথা এক লোক হচ্ছে চাচা চৌধুরীর সহকারি।নাম তার সাবু।রিতিমত বডিবীল্ডার, রক-টক তো অনেক পরে এসেছে।
আরো কিছু চরিত্র আছে – বিল্লু, পিংকী, চান্নি চাচী, রমন ও শ্রীমতিজী।এগুলোর সবি প্রাণের সৃষ্টি। সবগুলোই প্রিয় তালিকায় ছিলো, আছে, থাকবে।
কি অসাধারন সব গল্প – খুব বেশি প্যাঁচ নেই, বাড়তি ডায়লগ নেই।শুধু মজা আর মজা।এখনো বাসায় কয়েকটা পুরোনো কমিক্স আছে, হঠাৎ ইচ্ছে হলে উল্টে পাল্টে দেখি। কত স্মৃতি মনে পড়ে।কারোর কাছে তো সব কমিক্স থাকতো না, তাই নিজেদের মধ্যে অদল-বদল করে পড়তাম।আর কেউ না দিলে তার সাথে কথা বলা বন্ধ। কিভাবে অন্য একটা ফাটাফাটি কমিক্স কিনে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পড়া যায় সেই ফন্দি আঁটতাম।বাবা প্রথম স্কুলের বইয়ের বাইরে যে বইটা কিনে দিয়েছিলেন সেটা ছিলো চাচা চৌধুরীর কমিক্স, ওটা আমার কাছে এখনো আছে।
বাংলাদেশেও এখন অনেক কমিক্স তৈরি হচ্ছে তবে বেশিরভাগি পত্রিকা বা ম্যাগাজিন ভিত্তিক।হচ্ছে এটাই বড় কথা।আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে আমরাও বাংলাদেশে কমিক্স’এর সুদিন দেখতে পাবো।
শতকিছুর পরেও গুরু তার অবস্থানে নিজ গুণেই সমাসিন থাকেন।আর ভারত-বাংলাদেশের কমিক্স’এর গুরু নিঃস্বন্দেহে প্রাণ।প্রাণ তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই বেঁচে থাকবে বহু যুগ।প্রাণ’কে প্রাণ থেকে শ্রদ্ধা জানাই।

মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০১৪

অতুলের গল্প(৫) ~ জয়ন্ত ব্রহ্ম

বর্তমান সময়ে……
আজ বিশেষ একটা দিন অতুলের জন্য । বাবা তাকে ঘরে বন্ধ করে রাখলেও তাতে আজ আর তার কোন আপত্তি নেই । মাকে সে ফিরে পেয়েছে নিজের কাছে । বাবাকে একবার বলেও ছিলো ও । কিন্তু বাবা বিশ্বাস করেননি তার কথায়, কেবল দুঃক্ষি চোখ নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন তার দিকে । শেষে ছেলের চরম পরিনতির কথা চিন্তা করে রিহ্যাব সেন্টারেও দিয়েছিলেন কিন্তু লাভ হয়নি । অতুল জানতো তাকে পালাতেই হতো নইলে আবার সে তার মাকে হারাবে চিরদিনের জন্য । তবে এ জন্য আজ আর তার বাবার উপর তার কোন রাগ নেই কারন আজও তাকে  মা দেখা দেবেন । আজ যে করেই হোক তাকে নেশা করতেই হবে । গত পরশু মা তাকে বলেছিলেন অনেক আদর হলো এবার তাকে কোথায় যেনো তার সাথে যেতে হবে । যাতে আজীবন সে তার মার সাথে থাকতে পারে তাকে যেন আর এই নরক যন্ত্রনা ভোগ করতে না হয় । গত মাসের শেষের দিকে বাবার আলমারি থেকে টাকা চুরি করে তিন পাতা সেই জাদুর ট্যাবলেট কিনেছিলো অতুল । তারই শেষ একটা আজ সে সেবন করলো ধোঁওয়া বানিয়ে । অন্যান্য দিনের মত আজও চারদিক পাল্টে গেলো । মা এলেন মুখে তার ভুবন জুড়ানো হাসি নিয়ে কিন্তু কাছে এলেন না । দুর থেকে দুই হাত বাড়িয়ে অতুলকে কাছে ডাকলেন । অতুল যেনো উড়ে চলে গেলো তার মার বাড়ানো দুই হাতের দিকে মুখে হাসি আর দুচোখে কান্না নিয়ে । এ কান্না কষ্টের নয় বরং চরম সুখের । আজ আর সে কিছুতেই তার মাকে যেতে দেবে না । বুকের সাথে জাপটে ধরে রাখবে তার মাকে চিরজীবনের জন্য   


পরিশেষে.......
তুমুল বর্ষণ শুরু হয়েছে আজ, বৃষ্টি যেন আজ সমস্ত কিছু ধুঁয়ে মুছে সাফ করে দেবে।প্রবল বর্ষণ মাথায় নিয়ে ছাতা হাতে ঐ প্রেম নিবেদনরত ছেলেটি দাড়িয়ে আছে আজো। তার অন্য হাতে ধরা গোলাপের তোড়াটি বার বার এলোমেলো করে দিয়ে যাচ্ছে পাগলা বাতাস। তবু সে অপেক্ষায় আছে মেয়েটির ফেরার আশায়। মেয়েটি আজও তাকে পাশ কাটালো চোখে বিদ্রুপাত্তক দৃষ্টি নিয়ে। বিমর্ষ নয়ন নিয়ে ছেলেটি হয়তো চলেই যেতো কিন্তু একটা জিনিষ তাকে রাস্তায় আঠার মত আটকে দিলো। রাস্তার পাশের আটতলা বাড়ির ছাত থেকে একটি ছেলে দৌড়ে এসে ঝাপিয়ে পড়তে যাচ্ছে। সেই ছেলেটি যে প্রতিদিন ছাত থেকে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো। চিৎকার করে বলতে চাইলো কিছু কিন্তু বলা আর হলো না, ছেলেটি আটতলার ছাত থেকে লাফ দিয়েছে।

অতুলের গল্প(৪) ~ জয়ন্ত ব্রহ্ম


সেদিন বিকেল বেলা…………
জীবনে প্রথমবারের মত নেশা করতে যাচ্ছে অতুল। এর আগে সে সিগারেট পর্যন্ত খায়নি। তার বাব বলতেন এধরনের জিনিস শরীরর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দেয়, তাই সমবয়েসি অনেকেই এসব করলেও সে কখনো তা হাতে নিয়েও দেখেনি। তাই আজ তাকে মাদকের ধোওয়া টানতে হবে ভেবেই তার যেন কেমন লাগতে লাগলো, উত্তেজনায় বুক দুরু দুরু করছে। আস্তে করে সে তার সৎমায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ছাদের চিলেকোঠায় চলে এলো এবং দরজা বন্ধ করে একটি একশো পাওয়ারের বাল্ব হাতে নিয়ে কাজ শুরু করলো। কাচের বাটি আনতে গেলে তাকে তার সৎমায়ের কাছে হাজারটা কৈফিয়ৎ দিতে হতো তাই সে বাল্ব ব্যবহারের কথা চিন্তা করে। সে বাল্বটিকে না ভেঙে তার ভেতরের সব জিনিস বাইরে বের করে আনলো, ব্যাস গোটা বাল্বটিই এখন একটি কাচের পাত্র। সে হাতে একটি ট্যাবলেট নিয়ে তার গন্ধ শুকলো কিন্তু তাতে সে কোন গন্ধ পেলোনা,  ট্যাবলেটটা দেখতে এক টাকার কয়েনের মত তবে আকারে আরও বড়। সে ট্যাবলেটটি একটি কাগজে মুড়ে তাতে হালকা ইটের বারি দিয়ে তা মিহি গুরো করলো। এবার সে গুরোটি বাল্বে ঢেলে বাল্বটির মুখ বন্ধ করে বাল্বটি একটি মোমের উপর ধরলো। আগুনের তাপে বেশ দ্রুতই গুরোটি বাষ্পে পরিনত হয়ে হালকা সাদা অথচ গাড় ধোঁওয়ায় পরিনত হচ্ছে।এক সময় পুরো বাল্বটি ধোঁওয়ায় ভরে গেলো, এখন শুধু অতুলকে তা বুক ভরে টেনে নিতে হবে। সাহসে ভর করে অতুল বাল্বটি মুখের কাছে এনে তাতে ছোট একটা টান দিল। জীবনে প্রথমবার, ধোঁওয়া তার গলা আর ফুসফুসে জ্বলন ধরিয়ে দিলো। তাড়াতাড়ি বাল্বের মুখে আঙ্গুল দিয়ে চোখমুখ বিকৃত করে ফেললো। ওফ্ কি জঘন্য শ্বাদ এর। এটুকুতেই যদি এ অবস্থা হয় তবে পুরোটা সে কি করে টানবে?।  হঠাৎ চোখ পরলো তার মায়ের ছবির উপর , দেখলো মা ছবি থেকে এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছেন। দৃশ্যটা তার সমস্ত যন্ত্রনা ভুলিয়ে দিলো, যেমন করেই হোক তাকে পুরো বাল্বটি খালি করতে হবে মাকে কাছে পেতে হলে। এবার নিরদিধ্বায় অতুল বাল্বের সমস্ত ধোঁওয়া ফুসফুসে চালান করলো। এবার আর তার কোন কষ্ট অনুভব হলো না এমনকি নাক মুখ দিয়ে একটু ধোঁওয়াও বেড়হয়ে আসলো না।
তার ফুসফুস যেন ভোজবাজির মতই সমস্তটা হজম করে নিয়েছে বেমালুম। দুনিয়াটা চোখের সামনে যেন দুলতে শুরু করলো অতুলের, মাথা ঘুরতে লাগলো ভিষন ভাবে। মনে হলো মধ্যাকর্ষণ যেন তার সমস্ত শক্তি দিয়ে অতুলকে হিংস্র ভাবে মাটির সাথে পিষে ফেলবে এক নিমিশে। প্রচন্ড কষ্টে চোখদিয়ে পানি চলে এলো, এরই মাঝে মায়ের কথা মনে পরলো অতুলের। ইস মা যদি একবার তাকে কাছে টেনে আদর করতেন!। সময় জ্ঞানের হিসেব ভুলে গেলো অতুল। মনে হলো কোথায় যেন চলে যাচ্ছে সে। ওফ এত কষ্ট আর কতক্ষন সে সইবে? এখনো কেন মা  কাছে আসছেন না? তবেকি ছেলেটি তাকে মিথ্যা বলেছিলো ?  তাকেও আসলে তার মত এডিক্ট বানাতে চেয়েছিলো?। আর পারছেনা অতুল, যে কোন মুহুর্তে সব কিছু অন্ধকার হয়ে যাবে চোখের সামনে থেকে। শেষ বারের মতন মাকে পাশে দেখতে চাইলো অতুল কিন্তু কিছুই দেখতে পারলোনা। আস্তে আস্তে তার চোখ বন্ধ হয়ে আসলো। এভাবে ঠিক কতক্ষন গেলো বলা যায়না। মাথায় একটা কোমল স্পর্শ পেলো অতুল। এতো কোমল সে স্পর্শ যার টান কিছুতেই এড়ানো সম্ভব নয়। কানে গেলো নরম সুরে কেউ তার নাম ধরে ডাকছে।তার চুলে বিলি কেটে দিয়ে মধুর কন্ঠে কথা বলছে তার সাথে। অনেক কষ্ট হলো তার ছোখ খুলতে এবং যা দেখলো তাতে নিজের দুই চোখকে বিশ্বাস করতে পারলোনা। মা বসে আছেন তার মাথা নিজের কোলো তুলে নিয়ে।তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন, পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। তার মা, তার সত্যিকারের মা,  যাকে সে হারিয়ে ফেলেছিলো তার জীবন থেকে চিরদিনের জন্যই। অতুল আর থাকতে না পেরে তার মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ফেললো। এতো দিনের জমানো বুক ভরা অভিমান আর আবেগ যেন এভাবেই সে প্রকাশ করতে চায় তার সত্যি কারের মায়ের বুকে মাথা রেখে। আজ অতুলের সমস্ত প্রতিক্ষা শেষ হয়েছে। বিধাতার কাছ থেকে আজ সে ছিনিয়ে এনেছে তার মাকে। আজ এই পৃথিবীতে চাওয়ার বা পাওয়ার মত আর কিছুই অবশিষ্ট নেই তার। এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলো অতুল তার মার অনিন্দ সুন্দর মুখটার দিকে।