মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট, ২০১৪

প্রাণ ও কমিক্স ~ আরাফ করিম

 প্রাণ, যাকে ভারতের ওয়াল্ট ডিজনী বলা যেতে পারে।গত ৫ আগস্ট তিনি মারা গেলেন।সত্যিই খবরটা পেয়ে খুব খারাপ লেগেছিলো।তাঁর সৃষ্টি করা কমিক্স’এর চরিত্রগুলোর কারনে অনেকখানি রঙীন চিলো আমার ছোটবেলা।
ছোটবেলায় টিভিতে কার্টুনের এত রমরমা ছিলো না, কার্টুন চ্যানেলের কথা তো মাথাতেও আসেনি।ছোটদের উপযোগী সিনেমাও দেখোনো হতো কম বিটিভিতে।তখন ওই বিটিভিই ভরসা।ডিসের বাহারী চ্যানেলগুলো এসেছে আরো কিছুটা সময় পরে। সে সময় আমাদের একটা বড় বিনোদন ছিলো কমিক্স। বই পড়তে ভালোবাসতাম, তাই কমিক্স।পরিচয় হয় চাচা চৌধুরীর সাথে। প্রচন্ড বুদ্ধিমান ছোটখাট গড়নের এক বয়স্ক ভদ্রলোক, মাথায় পাগড়ী পরা।এহেন চেহারার একটা লোক যে রিতিমত হিরো বনে যেতে পারে তা ভাবতেই পারিনি।বড় হয়ে তার মত বুদ্ধিমান হতে চাইতাম।
অসম্ভব রকম লম্বা মানুষের মতন দেখতে ন্যাড়া মাথা এক লোক হচ্ছে চাচা চৌধুরীর সহকারি।নাম তার সাবু।রিতিমত বডিবীল্ডার, রক-টক তো অনেক পরে এসেছে।
আরো কিছু চরিত্র আছে – বিল্লু, পিংকী, চান্নি চাচী, রমন ও শ্রীমতিজী।এগুলোর সবি প্রাণের সৃষ্টি। সবগুলোই প্রিয় তালিকায় ছিলো, আছে, থাকবে।
কি অসাধারন সব গল্প – খুব বেশি প্যাঁচ নেই, বাড়তি ডায়লগ নেই।শুধু মজা আর মজা।এখনো বাসায় কয়েকটা পুরোনো কমিক্স আছে, হঠাৎ ইচ্ছে হলে উল্টে পাল্টে দেখি। কত স্মৃতি মনে পড়ে।কারোর কাছে তো সব কমিক্স থাকতো না, তাই নিজেদের মধ্যে অদল-বদল করে পড়তাম।আর কেউ না দিলে তার সাথে কথা বলা বন্ধ। কিভাবে অন্য একটা ফাটাফাটি কমিক্স কিনে তাকে দেখিয়ে দেখিয়ে পড়া যায় সেই ফন্দি আঁটতাম।বাবা প্রথম স্কুলের বইয়ের বাইরে যে বইটা কিনে দিয়েছিলেন সেটা ছিলো চাচা চৌধুরীর কমিক্স, ওটা আমার কাছে এখনো আছে।
বাংলাদেশেও এখন অনেক কমিক্স তৈরি হচ্ছে তবে বেশিরভাগি পত্রিকা বা ম্যাগাজিন ভিত্তিক।হচ্ছে এটাই বড় কথা।আশা করি অল্প সময়ের মধ্যে আমরাও বাংলাদেশে কমিক্স’এর সুদিন দেখতে পাবো।
শতকিছুর পরেও গুরু তার অবস্থানে নিজ গুণেই সমাসিন থাকেন।আর ভারত-বাংলাদেশের কমিক্স’এর গুরু নিঃস্বন্দেহে প্রাণ।প্রাণ তাঁর সৃষ্টির মধ্যেই বেঁচে থাকবে বহু যুগ।প্রাণ’কে প্রাণ থেকে শ্রদ্ধা জানাই।