রবিবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭

বাটার ভাইয়ের ইতিহাস

বাটার ভাইয়ের ইতিহাস
+++++++++++++++++
"ডিস্টাব করিস না, থাণ্ডার প্যারালাইজে আছি।" এটা বাটার ভাইয়ের কমন ডায়লগ। খুব চিন্তার মধ্যে থাকলে এটা সে বলবেই। তো এহেন বাটার ভাই কি করে বাটার ভাই হলেন সে এক ইতিহাস বটে।

আমরা তখন এসএসসি ডিঙিয়ে সবে কলেজ জীবন স্টার্ট করেছি। অল্প বয়সি দাড়িগোঁফ কেটে-ছেঁটে আজব সব স্টাইল করে আর শার্টের কলারটা উঁচু করে এলাকায় টহল দেই। বাটার ভাই তখন লেখাপড়ায় ইস্তফা দিয়ে নিয়মিত আমাদের সাথে পার্কে আড্ডা দেয়। লেখাপড়া ছেড়ে দেওয়া সম্পর্কে তার বক্তব্য - "ওইসব বইটই আমার লাইগা লেখছে না"।

সে সময় একবার হোল কি, বাটার ভাইয়ের ব্যাপক ইচ্ছা হল ফর্সা হওয়ার। যে যা বলছে তাই করছে। ফর্সা তাকে হতেই হবে। কোত্থেকে যেন শুনে আসলো গায়ে বাটার/মাখন মেখে রোদে বসে থাকলে ফর্সা হওয়া যায়। ব্যস, আর কে আটকায়। একদিন দুপুরে হঠাৎ দেখা গেল বাটার ভাই বাসার ছাদে প্রায় দিগম্বর হয়ে গায়ে বাটার মেখে চিত হয়ে শুয়ে আছে। আশেপাশের বাড়ি থেকে যে লোকজন তাকে দেখে দাঁত ক্যালাচ্ছে সেদিকে তার কোন খেয়ালই নাই।

তারপর থেকেই সবাই তাকে বাটার বলে ডাকতে শুরু করে আর সিনিয়ার হওয়ায় আমরা বলি বাটার ভাই।

আজকাল বাটার ভায়ের মধ্যে কেমন একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। উদাস উদাস ভাব, খালি আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে আর মাঝে মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।

জিজ্ঞেস করলাম - "কি হয়েছে?"
"দিলডা পকিষ্টিক লাইট হইয়া গেছে রে।" বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।
বুঝলাম হৃদয় ঘটিত ব্যপার। সবার সাথে আলোচনা করা দরকার।

বিকেলে সবাইকে সাথে নিয়ে বাটার বাইয়ের কাছে বসলাম। বাবু জিজ্ঞেস করলো - "ভাই কি হয়েছে? খুলে বলেন?"
"কার প্রেমে পড়েছেন?" - সৌরভের প্রশ্ন।
"নিপা, নিপায় আমার দিলডা লইয়া গেছে রে।" বাটার ভাই যাত্রার নায়কের মত করে উত্তরটা দিলেন।
"হুম" - সবাই একসাথে বুঝতে পারলাম ব্যাপারটা।
"ফোন নাম্বার লাগবে?" - চঞ্চল বলল। যে কোন মেয়ের নাম্বার যোগাড়ের বিষয়ে ও একজন এক্সপার্ট। সে নিজেকে লাভ গুরু দাবী করে, যদিও আজ অব্দি একটাও প্রেম করতে পারে নাই।
"আরে নারে, কথা হইছে।" বাটার ভাই একটু বিরক্ত হল।
"তাহলে আর সমস্যা কি?" আমি বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করলাম।
"কথা হইছে তয়..." এটুকু বলে একটু থামল।
"তবে কি?" চঞ্চল আগ্রহী হয়ে উঠলো।
"বলছে প্রেমও করবে তয়..."
"তবে কি?" এবার সবাই আগ্রহী হয়ে উঠলাম।
"তয়... সাদা সাহেবগ মতন ঠ্যাং গাইড়া প্রস্তাব দিতে কইছে।" বুঝলাম ইংরেজি কায়দায় হাঁটু গেঁড়ে বসে প্রপোজ করতে বলেছে।
চঞ্চলের উৎসাহ এবার সবথেকে বেশি। আমাদেরও কিছু কম না। "আমি আপনাকে প্র্যাকটিস করাব, আমরা সবাই থাকব আপনার সাথে।" উপর- নিচ মাথা নাড়লাম আমরা সবাই।

এটাই বাটার ভাইয়ের প্রথম প্রেমে পড়া নয়, বছরে দু'তিন বার সে এরকম প্রেমে পড়ে! কিন্তু এইবারি প্রথম তাকে ইংরেজি কায়দায় প্রপোজ করতে হচ্ছে।

টানা দুদিন দিনে দুবেলা করে চলল প্র্যাকটিস। সে এক দেখার মত জিনিস। একবার ডান হাঁটুর যায়গায় বাম হাঁটু মাটিতে ঠেকিয়ে ফেলছে, একবার মাফ চাওয়ার মত করে দুহাতে ফুল ধরছে কখনো আমাদের কাওকে দেখে বলছে - "তরে দেইখ্যা ভাব আইতাছে না", আর ইংরেজির কথা আর নাই বা বললাম।

যাইহোক, শেষমেশ দুদিন পর নিপা মানে আমাদের হবু ভাবির কাছে পাঠানো হল বাটার ভাইকে। পার্কের একটা কোনায় চলবে এই প্রপোজ পর্ব। আমরাও কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি যেন কোন গণ্ডগোল হোলে সামলাতে পারি।

বাটার ভাই হাঁটু গেঁড়ে বসল, তারপর ডানহাতে একটা লাল গোলাপ উঁচু করে ধরে তাকাল তার হবু গার্লফ্রেন্ডের দিকে। বলল - "আই... লাভ ইউ... রিপা।"

"কি? রিপা কে?" - নিপা ভাবি রিতিমত চিৎকার করে প্রশ্নটা করলেন। এই প্রথম আমরা তার কথা শুনলাম। "তোমার আগের গার্লফ্রেন্ড?"

"হ" বাটার ভাইয়ের উত্তর। বাকিটা ইতিহাস!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন