মঙ্গলবার, ২৯ আগস্ট, ২০১৭

জলে ভাসা দ্বীপ

চৌদ্দ শতকের আগ পর্যন্ত দক্ষিন আমেরিকার উরু (Uru) জাতীগোষ্টির লোকেরা হ্রদের কিনারে কাঠ, খড়, ছন ইত্যাদি দিয়ে নিজেদের তৈরি নৌকাতেই বসবাস করত; অনেকটা আমাদের দেশের বেদে সম্প্রদায়ের মতই। ডাঙায় বিচরণ আর নৌকায় ঘুম এই করে ভালোই কাটত যদি এমারা ইন্ডিয়ানরাও (Aymara Indians) একই এলাকায় বসবাস না করত। এমারা ইন্ডিয়ানরা ছিল দাঙ্গা হাঙ্গামায় উরুদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী। তাই এমারা ইন্ডিয়ানদের সাথে উরুদের নিয়মিত ঝামেলা-মারামারি লেগেই থাকত। শেষমেশ এমারাদের সাথে না পেরে নিজেদের পুরোপুরি জলে নিয়ে যেতে বাধ্য হল উরু’রা।
উরুদের তৈরি নৌকায় উরু রমণী
চৌদ্দ শতকের শুরুর দিকের কোন একটা সময় উরু’রা বাসস্থান হিসেবে বেছে নিল ভাসমান দ্বীপ যা তারা তৈরি করেছে টিটিকাকা (Titicaca) হ্রদের উপর। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকল দ্বীপের সংখ্যা। দ্বীপ তৈরির মূল উপাদান আঁখ গাছ। মজবুত করার জন্য ব্যবহার করা হয় গাছের ডালপালা, মূল আর কাণ্ড। শুধু দ্বীপ নয় উরুদের বাড়ি এমনকি তাদের ব্যবহারের নৌকাও আঁখ গাছ দিয়ে তৈরি।
আঁখ গাছ পানিতে দ্রুত পোঁচে যায় তাই নির্ধারিত ব্যক্তিরা নিয়মিত ভাবে প্রতি মাসে আঁখ গাছ পরিবর্তনের কাজটি করে থাকে।
এতো গেল উরু দের কথা এবার আসি মেক্সিকোর রিচার্ট সোয়া নামের এক ভদ্রলোকের কথায়। যিনি নিজের জন্য একটি ভাসমান প্রাসাদ বানিয়েছেন ইসলা মুখেরেস এ! শুধু ভাসমান হলেও নাহয় কথা ছিল, দ্বিপটি তিনি বানিয়েছেন প্রায় দেড় লক্ষ পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে!
ভাসনাম জোয়েক্সি আইল্যান্ড 
ইন্টারনেট কানেকশন, বৃষ্টির পানি ধরে রাখার সরঞ্জাম, বিদ্যুতের জন্য সোলার প্যানেল, ওয়াশিং মেশিন, গোসলের জন্য জাকুজি ইত্যাদি আধুনিক সুযোগ সুবিধা সহ দ্বিপটি বানাতে তার সময় লেগেছে সাত বছর। তিনি দ্বীপের নাম দিয়েছেন ‘জোয়েক্সি আইল্যান্ড’৷
ব্যক্তি উদ্যোগে তৈরি ভাসমান দ্বীপের উদাহরণ কিন্তু আরও আছে, এই যেমন – কানাডার ভ্যাঙ্কুভারের উপকূলে ‘ফ্রীডম কৌভ’ বা ‘স্বাধীন দ্বীপ’। যেটি তৈরি করেছে ওয়েন অ্যাডামস (৬৬) এবং ক্যাথিরিন কিং (৫৯) দম্পতি।
ভ্যাঙ্কুভারের ‘ফ্রীডম কৌভ’ বা ‘স্বাধীন দ্বীপ’
১৯৯২ সাল থেকে তারা এই দ্বিপটির নির্মাণ কাজ শিরু করে। এটি অবশ্য ইট, কাঠ, রড, সিমেন্ট দিয়েই তৈরি করা হয়েছে।
এই দম্পতীর দুজনেই শিল্পী। তাদের নির্মিত এই দ্বীপটিরে রয়েছে ড্যান্স ফ্লোর, আর্ট গ্যালারি এবং গ্রিন হাউজ প্রযুক্ত ব্যবহার করে ফলফুল আর সবজী বাগান। আর নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা কি আর বলব।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন