মঙ্গলবার, ২২ জুলাই, ২০১৪

অতুলের গল্প(৩) ~ জয়ন্ত ব্রহ্ম



বছর তিনেক আগের কথা , অতুল সবে মাত্র এস.এস.সি. পরীক্ষা শেষ করেছে। ভালোই কাটছিলো দিন গুলি। তার বাবা আর তার সৎমা দুজনেই অধীর হয়ে অপেক্ষায় আছেন তার রেজাল্টের আশায়। মিঃ হাসেম জানতেন ছেলে তার খুবই ভালো রেজাল্ট করবে।সময়ে সময়ে তিনি উচ্চ গলায়ই বলতেন তাঁর ছেলে নাকি হুবহু তার মতই হয়েছে। মিসেস সেলিনা তার স্বামীর সাথে আলোচনা করতেন কোন কলেজে ছেলেকে ভর্তি করানো যায়। অবশেষে রেজাল্টের সময় উপস্থিত হলো।সবাই দেখলো সত্যি অতুল খুবই ভালো রেজাল্ট করেছে। এতে অতুলের প্রতি বাবা মায়ের ভালোবাসা আরো দ্বিগুণ হলো। তবে এত আদর আর ভালোবাসার মাঝে থেকেও অতুলের তার আসল মায়ের কথা মনে পরতো। তার মায়ের একটি ছবি তার কাছে ছিলো। মাঝে মাঝেই সে ছবিটি বের করে তার মাকে সে দুচোখ ভরে দেখতো আর নিরবে চোখের জল ফেলতো। ইস আবার মাকে ফিরে পেলে কি ভালোই না হোতো, বইয়ে পড়েছে মার কোলে মাথা রেখে চুপটি  করে শুয়ে থাকার মজাই নাকি আলাদা। আচ্ছা সে কি কখোনো তার মায়ের কোলে এমনি করে মাথা রেখে শুয়ে থেকেছে? তখন  কি তার মা স্নেহ ভরে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন?  মনে করতে পারেনা অতুল। সে তখন খুব ছোট যখন তার মা মারা যায়। ঘরের বাইরে অতুলের বিশেষ বন্ধু বান্ধব নেই। কথা কম বলে তাই সমবয়েসি অনেকেই তাকে এড়িয়ে চলে।এতে অতুলের বরং ভালোই লাগে অযথা আড্ডা বাজির চেয়ে চুপচাপ বসে থেকে চিন্তার জগতে হাড়িয়ে যেতেই সে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু একদিন হঠাৎ করেই পরিচয় হলো একটি ছেলের সাথে। ছেলেটি তাদের এলাকাতেই থাকে আর অনেকটা তার মতই চুপচাপ।একটু অদ্ভুত দেখতে, এলোমেলো চুল আর চোখ দুটোতে কেমন যেন একটা ঘোরলাগা দৃষ্টি। তবে পোশাক আশাক দেখে মনে হয় ভালো ঘরের ই ছেলে। কৌতুহল নিয়ে ছেলেটির সাথে পরিচয় হতে গেলো অতুল। প্রথম প্রথম একটু অসস্তিতে ভুগলেও এক সময় ছেলেটি সহজ হয়ে গেলো অতুলের সাথে, বন্ধুত্বও গাড় হতে সময় লাগলো না। অতুল জানতে পারলো তার মতই ছেলেটির মা মারা গেছেন। পরে বাবা আরেকটা বিয়েও করেন। তার সৎমা প্রথম থেকেই তাকে দেখতে পারতেন না আর এখন দিন দিন আরো রুড় হয়ে যাচ্ছেন। তার বাবা এসব জেনেও বিশেষ কিছুই করতে পারছেন না তার জন্য কারন তিনি তার সৎমায়ের রুপের সামনে অসহায়। এসব অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে সে একদিন ড্রগে আসক্ত হলো কারন এটিই একমাত্র জিনিস যা তাকে এসব অত্যাচার থেকে  দূরে সরিয়ে রাখে, তবে তা অবশ্য অতুলের জানা ছিলো না। একদিনের কথা অতুল ছেলেটির সাথে গল্প করছে। ছেলেটি একটু উত্তেজিত হয়ে আছে কোন কারনে, চোখে মুখে আনন্দের ছাপ স্পষ্ট। অতুল লক্ষ করেছে ইদানিং মাঝে মাঝেই ছেলেটি এরকম ভাবে বদলে যায় যা তার নিয়ম বিরুদ্ধ। তাই আজ অতুল তাকে চেপে ধরলো, এ অদ্ভূত কারনের মানে কি তা তাকে জানতেই হবে।
নিরুপায় হয়ে এক সময় সে অতুলকে বলতে রাজি হলো তবে অতুলকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে যে এ বিষয়ে সে অন্য কারোর কাছে মুখ খুলবে না।সে নাকি তার মৃত মাকে দেখতে পায়।অবিশ্বাষ্য ব্যপার, মৃত মানুষ কখোনই কারো সাথে দেখা করতে পারে না অতুল তা ভালো করেই জানে।অতুল ভাবলো ছেলেটি হয়তো কল্পনা করে নেয় তার মাকে। কিন্তু একথা সে তাকে বলেনা এতে সে কষ্ট পেতে পারে। তার নিজেরওতো মা নেই তাই মা নাথাকার কষ্ট কি তাসে ভালোই জানে।কয়েকদিন গেলো এভাবে। অতুল দেখলো বেশ ঘন ঘনই ছেলেটি তাকে তার মায়ের কথা বলছে। একটি বিশেষ সময়ে তার মা নাকি তার কাছে আসে তখন সে ঘোরে থাকে। তখন তার মা নাকি তার সাথে কথা বলেন তাকে আদরও করেন। ছেলেটি তাকে বললো একটি বিশেষ ধরনের মাদক সে গ্রহন করে যার কারনে সে তার মাকে দেখতে পায়। অতুল ছেলেটিকে যতটুকু চিনিছে তার মনে হচ্ছে সে মিথ্যা বলছেনা। সে এবার বেশ আগ্রহী হয়ে উঠলো।এটাইতো সে চাইতো সবসময়, এমন একটা কিছু যার মাধ্যমে সে আবার তার মায়ের সাথে দেখা করতে পারে। অতুল ছেলেটিকে চেপে ধরলো কি করে ঐ মাদক হাতে পাওয়া যায় তা তাকে জানতেই হবে। ছেলেটি প্রথমে খুবই আপত্তি করলো কারন সে চাচ্ছিলোনা  অতুলের মত ভালো ছেলে মাদক নিক। কিন্তু অতুলের করুন আকুতি মিনতির কাছে একসময় সে হার মানলো। সে তাকে একটি বিশেষ মাদকের কথা বললো যার দাম অনেক। তবে শুধু টাকা থাকলেই তা পাওয়া যায়না এর জন্য অনেক চেনা জানারও  প্রয়োজন হয়। টাকা অতুলের কাছে কোন ব্যপার না চাইলেই বাবা দিয়ে দিবেন। পরদিন ছেলেটি তাকে একটি বিশেষ ধরনের ট্যাবলেটের পাতা তাকে ধরিয়ে দিলো। বললো একটি ট্যাবলেট গুড়ো করেএকটি কাচের পাত্রে রেখে তাতে তাপ দিতে হবে।তাতে তার থেকে গন্ধহীন হালকা সাদা কিন্তু খুব ঘন ধোওয়া বেড় হবে আর তা অতুলকে বুক ভরে টেনে নিতে হবে, তার পর শুধু এক দৃষ্টিতে মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। একসময় যখন একটা ঘোরলাগা ভাব অতুলকে ঘিরে ধরবে তখনই নাকি মা অতুলকে দেখা দিবেন। অতুল ট্যাবলেট গুলো পকেটে ভরে বাসার দিকে হাটা দিলো। আজ সে খুবই উত্তেজিত, আবার সে হয়তো তার হারিয়ে যাওয়া মাকে দেখতে পাবে। বাবার কথা ভেবে সে কষ্টপেলো। সে নেশা করতে যাচ্ছে তা জানতে পারলে তিনি খুবই কষ্ট পাবেন। কিন্তু সে জানে মায়ের দেখা পেতে হলে তাকে এই মাদক নিতেই হবে তাছারা তার কোন বিকল্প উপায় নেই। মায়ের সাথে তাকে দেখা করতেই হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন