বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১৬

সেলসম্যান

এদিক ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম কজনের চোখে পড়েছে ব্যাপারটা।
রিক্সাটার জন্যেই যত গণ্ডগোল। ভাবলাম রিক্সাটা আসতে আসতে আমি রাস্তা পার হয়ে যাব। বুঝতেই পারিনি ওটার পেছনেযে মোটর লাগানো আছে। এই এক যন্ত্রণা হয়েছে আজকাল, একে একে রিক্সাগুলোকে ধরে ধরে মোটর লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অনেকটা কচ্ছপের পেছনে মোটর লাগিয়ে দেওয়ার মত ব্যপার!
যখন বুঝলাম ওটা মোটর লাগানো রিক্সা গতি বেশি তখন দ্রুত পার হতে গিয়ে হুড়মুড় করে গিয়ে পরলাম একটা অটোর (ইজি বাইক) সামনে। মনে হয় পূর্বপুরুষের পুণ্য ছিল তাই অটোটা ব্রেক কষল। ধপাস করে সামনের গ্লাসে একটা ধাক্কা খেয়ে রাস্তায় পড়লাম।
কয়েক মুহূর্তের মৃত্যুভয় তারপর অটোওয়ালার বকা শুনতে শুনতে উঠে রাস্তা পার হলাম। গালিগালাজ করেনি সম্ভবত পরনের পোশাগুলোর জন্য। সভ্য দুনিয়ায় মানুষের ওজন বাড়ানো-কমানোর ক্ষেত্রে পোশাক একটা বড় ভূমিকা রাখে।
বেশি কিছু হয়নি, বাঁহাতের আস্তিনের দিকে কিছুটা ছিঁড়ে গেছে। চামড়াও ছড়ে গেছে কিছুটা। জ্বলছে। 


ছেঁড়া শার্ট নিয়ে ঘুরে বেড়ানোটা খুব বিরক্তিকর। চাইলে এখনি বাড়ি গিয়ে বদলে আসতে পারি কিন্তু তাতে অনেক দেরি হয়ে যাব। হাতাটা গুটিয়ে এভাবেই যেতে হবে।
স্কুলে এসব নিয়ে খুব বায়না করতাম। পোশাক পরিষ্কার আর ইস্ত্রি করা না হলে আমি পড়তাম না। এখন তো আর সেসব দিন নেই। টাকা যখন পায়ের শেকল হয়ে যায় তখন রুচিবোধ বদলাতে বাধ্য।
কোন একটা ডিসপেনসারি থেকে হাতটা একটু পরিষ্কার করিয়ে নেবো। ওষুধ লাগবে না, অযথা টাকার গচ্চা। দূর্বাঘাসের রস দেওয়া যেতে পারতো। কিন্তু এই শহরে দূর্বাঘাস পাওয়া যায় নির্দিষ্ট কয়েকটা যায়গায়। তার উপর ওগুলোতে ধুলোর প্রলেপ তো থাকবেই। ওসব ভেষজ চিন্তা বাদ দেওয়াই ভালো এটা ধুলোর যুগ।

দোকানদাররা এমনিই সেলসম্যানদেরকে খুব ভালো চোখে দেখে না, তার উপর আজ আবার ছেঁড়া শার্ট! খুব খেয়াল করেছি ভালো পোশাক, সুন্দর করে আঁচড়ানো চুল, ক্লিন শেভড মুখ, চকচকে জুতা, হাতে ভালো একটা ঘড়ি এসব থাকলে বেশি অর্ডার পাওয়া যায়। চাকরীর শুরুতে কিছুদিন বন্ধুদের কাছথেকে এসব ধার করে পরে দেখেছি। অবশ্য এটা ছাড়া আর কোন রাস্তাও ছিল না, চাকরীটা পাকা করার জন্য তখন এই কৌশলটা খুব দরকার ছিল।

পরপর কিছুদিন অর্ডার খারাপ হলে ছাঁটাই করে দিতে কোম্পানি দুবার ভাববে না। এসব চাকরীর কোন ভরসা নেই। এই অবস্থায় চাকরীটা গেলে রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াতে হবে। ভাগ্যিস এক্সিডেন্টটা গুরুতর হয়নি, হলে হাসপাতালের খরচ কি করে দিতাম? ভাবতেই গাটা শিউড়ে উঠছে। মরে গেলে অবশ্য বেঁচে যেতাম।
সাধারণত অন্য কিছু করার সুযোগ না থাকলেই কেউ সেলসম্যান হিসেবে কাজ করে। আমিও ব্যতিক্রম নই। ছোটবেলায় স্বপ্ন দেখতাম ব্যাংকার হবো। তা তো আর হল না।তাই... জীবনের তাগিদে অল্প কিছু টাকার জন্যে আমি বেঁচে দিলাম আমার স্বপ্ন, রুচিবোধ আর ব্যাক্তিত্ব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন