বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

প্যাঁচাল-১ ~ আরাফ করিম

রাত তিনটা। এখনো জেগে আছি। ঘুম যে একেবারে আসছে না তা নয়। মাঝেমাঝেই এমন হয়, ঘুম আসছে কিন্তু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে না। কি যে জ্বালা। নাঘুমানোর প্রেকটিস আমার ইসকুলবেলা থেকে। খালি মনে হতো ঘুমালেই লস। আমার ঘর, ঘরের জিনিসপত্র, আমার বইগুলো(পাঠ্যবই বাদে), টিকটিকি, কিছুই দেখতে পাবো না ঘুমালে। মাধে মাধে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতান; রাতের আকাশ, হঠাৎ একটা রিক্সা বা গাড়ী বাসার সামনে দিয়ে চলে যাওয়া, জোঁনাকি, ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক, খুঁচড়া পথচারিদের টুকটুক কথা কিম্বা গান-এসব কিছুই শোনা হবে না দেখা হবে না ঘুমালে। আর যদি ঘুমের মধ্যে মরে যাই তাহলে তো কেল্লা ফতে!
একবার সখ করে বেড়ালের বাচ্চা এনেছিলাম পুষবো বলে। রাতে উঠে উঠে দেখতাম ওটাকে। যতবার উঠতাম ততবার দেখতাম জেগে আছে। মনে হতো ইনসোমনিয়ার রুগী। অবশ্য দু-তিন দিনেই ওটার উপর বিভিন্ন কারনে বিরক্ত হয়ে কাকে যেন দান করে দিয়েছিলাম।আমি কি মহৎ তাই না!
জীবনে প্রথম যে নারীর কথা রাত জেগে ভেবেছিলাম সে হল ‘মন্টেজুমার মেয়ে’। স্যার হেনরী রাইডার হেগার্ডের লেখা রোমঞ্চপন্যাসের এক চরিত্র। আহা, সে এক পুর্ন নারীই বটে। বইটার বিজ্ঞাপন দেখি এক পত্রিকায়। স্কুল থেকে ফেরার সময় কিনে ফেলি।বাসায় এসেই আর কোনো কথা নেই। কাপড় না পল্টেই বসে যাই বই নিয়ে। খাওয়া নেই দাওয়া নেই. হাত-মুখ ধোয় নেই। চুপচাপ পড়ছি তো পড়ছিই। একটানে পড়ে শেষ করলাম। উঠে দেখি সন্ধ্যা।কিসের সন্ধ্যা কিসের রাত আর কিসের কি, আমার তো ঘোরই কাটছে না। সত্যি বলতে আজো কাটেনি। এখনো চোখ বন্ধ করলে যেন দেখতে পাই। যাইহোক, সে প্রেম তো চিন্তার জগৎ ছাড়া আর কোথাও গড়াগড়ি খেলো না। তাই সে মনের কোনেই বসে থাক।
আচ্ছা রাতের বেলা তো নানান ধরনের পার্টি হয়, ক্লাবে, বাসায়, হোটেলে। তা আমি ভাবি, এরা যায় কখন, আনন্দ-ফুর্তি করে কখন, খায় কখন, বাড়ী ফেরে কখন, ঘুমায় কখন আর সকালে উঠে কাজেই বা যায় কিভাবে? আজিব ব্যপার!
রাত জেগে কত তিন গোয়েন্দা যে পড়েছি তার হিসেব কে রাখে। রাত জেগে পড়তাম, পাঠ্য বইয়ের মধ্যে ভরে লুকিয়ে পড়তাম। মাধে মধ্যেই ধরা পড়তাম মা অথবা বাবার কাছে। মার খাইনি তবে বকুনি খেয়েছি, বাবা অবশ্য খুব বেশি বকতেন না। ওই আসকারাতেই কিশোর পাশার ভূত ঘাড়ে চাপলো। কত চিমটি যে কাটলাম নিচের ঠোটে কিন্তু কিশোর পাশা আর হোতে পারলাম কোই?
যাক, রাত জেগে হুদাই প্যাঁচাল অনেক হলো। এবার থামি নোইলে রাতের যেটুকু বাকি আছে তাও যাবে। একটু ঘুমিয়ে নিই, সকালে উঠেই আবার যন্ত্র হতে হবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন