বৃহস্পতিবার, ২৮ মে, ২০২০

রম্য লেখার চেষ্টা

রম্য লেখার সিরাম চেষ্টা করেও যখন কিছু হয় না। তখন নিজেকে চিপে ভেতর থেকে রস বের করা ছাড়া তো আর কিছু করার থাকে না। নিচের লেখাগুলো তারই প্রকাশ। সাম্প্রতিক সময়ে এগুলো আমার ফেসবুকে স্থান পেয়েছে আর লাইক-কমেন্টের অভাবে ফেসবুক ফেটে চৌচির হওয়ার যোগাড় হয়েছে!

(১)
সালমান খানরে একবার প্রশ্ন করা হয় - রাতে যখন ঘুম আসে না, বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করেন তখন তিনি কি চিন্তা করেন।
তিনি উত্তরে বলেন যে তার নাকি বিছানায় ঘুম আসে না তাই কাউচের উপড়ে ঘুমান।

আমারও রাতে ঘুম আসে না কিন্তু ডাক্তারের নির্দেশ ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। তাই ভালাম সালমান খান টেকনিকটা আপ্লাই করে দেখি। কিন্তু কাউচ কোই পাবো। আমার ছাপরায় তো কাউচ নাই। তাই একটা বুদ্ধি বাইর করলাম। তিনটা চেয়ার এক যায়গায় কইরা তার উপড়ে তোষকটা চাপায়া সাইডে দুইটা বালিশ দিয়া একখান ফলস কাউচ বানাইলাম।

শুয়া দেখি দারুণ ফিলিংস। পাঁচ মিনিটের মধ্যেই ঘুম আইসা পড়ল😴 স্বপ্ন দেখলাম - আমি সালমান খানের বাড়িতে কাউচের উপড়ে ঘুমায়া আছি এমন সময় সালমান খান আইসা উপস্থিত। সে আমার দিকে একটা পিস্তল তাক কইরা বলল - তোর সইল্লে এত্তুডি ছ্যাদা করুম যে কনফিউজড হয়া যাবি, শ্বাস কোন দিক দিয়া নিবি আর...

ধড়ফড় কইরা ঘুম থাইকা উঠতে গিয়া তাল সামলাইতে পারলাম না চেয়ারগুলি নিয়া পইড়া গেলাম। শব্দ শুইনা আম্মা পাশের ঘড় থাইকা দৌড়াইয়া আইসা দেখে ফ্লোরের উপড়ে তিনটা চেয়ার, একটা তোষক, দুইটা বালিশের সাথে আমিও পইড়া আছি😝

কি বলবো বুঝলাম না। দাঁত ক্যালাইনা একটা হাসি দিলাম😁 ওইটারে হাসি না বইলা দাঁত দেখান বললেই ভালো হয়। বাংলা সিনেমার হিরোদের সৃতিশক্তি হারাইলে হিরোর মায়েরা হিরোদের দিকে যেইভাবে তাকায় আম্মা আমার দিকে সেইভাবে তাকাইল।


(২)
সকাল থাইকাই প্রতিজ্ঞা করি ১২ টার মধ্যে ঘুমায়া পড়ব। কিন্তু সন্ধ্যার পর থাইকা কেমন জানি সব আউলায়া যায়। ইউটিউব-ফেসবুকে সব ফাটাফাটি জিনিস আবিষ্কার করি। মাথায় দারুণ-দারুণ সব আইডিয়া আসে, মনে হয় আইজ রাইতেই গীতাঞ্জলির মত কিছু একটা লেইখা ফেলব🤔

একটু ইউটিউব, একটু ফেসবুক, একটু বই পরা, একটু সিনেমা দেখা আরও হাবিজাবি কামকাজ করতে করতে বাইজা যায় ১২ টা। এরপর লাগে খিদা। হালকা-পাতলা কিছু খাই। তারপর মনে হয় আরে ডাক্তারতো বলেছেন খাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা পরে ঘুমাইতে। ব্যাস...আগামী এক ঘণ্টার জন্যে আমার জাইগা থাকা জায়েজ😁

রাইত একটার দিকে আবার খিদালাগে...😜


(৩)
ছোট সময় আমি ভাবতাম - আমার ডাক্তার হওয়া ঠেকায় কে! এই রকম ভাবার কারণ আমার হাতের লেখা ছিল খুবই খারাপ।

একাধিক শিক্ষক আর হাপ ডজন বড় ভাইবোন আমাকে পড়াইতে ব্যর্থ হওয়ার পর আব্বা আমাকে পড়ানোর দায়িত্ত নিলেন। আব্বা খুবই রাগী লোক। এমনিতেই হাতের লেখা খারাপ তার উপরে আব্বা যখন কিছু লিখতে দিতেন তখন ভয়ে হাতে কাপাকাপি শুরু হইয়া যাইত। আব্বা ব্যাপারটা বুঝতে পারতেন। তাই হাতের লেখা নিয়া কোনদিন মারেন নাই শুধু একদিন বললেন - মাঝে মধ্যে বাংলা ভাষাতেও লেইখো তোমার ফার্সি তো আমার বুঝে আসে না।

আব্বা যেইদিন রাগ করতেন সেইদিন এলোপাথাড়ি মাইর দিতেন। আমার চিৎকার আর আব্বার এক্সপ্রেশনে এলাকাবাসী ভাবতো আশেপাশে কোন যায়গায় চোর ধরা পড়েছে। তাকে উত্তমমধ্যম দেওয়া হচ্ছে।

শুরুটা যেহেতু ডাক্তার দিয়ে করেছি তাই শেষটাও ডাক্তার দিয়েই করি...

'বানপ্রস্থের পথে' বইতে ওবায়দুল হক লিখেছেন- 'আপনার যদি অসুখ হয়, ডাক্তারকে কল করবেন। কারণ ওকে খেয়ে-পরে বাঁচতে হবে। ডাক্তার যে প্রেসক্রিপশন দেবে সে অনুযায়ী ওষুধ কিনবেন। কারণ ওষুধ দোকানিকে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে হবে। যে ওষুধ কিনে আনবেন খবরদার তা খাবেন না। কারণ আপনাকেও বেঁচে থাকতে হবে।'

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন