শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৫

আমার আর ঘরে ফেরা হল না

ঝগড়া হচ্ছিলো বাবার সাথে।

বাবা আমায় বলছিলেন- ভগবান এতো নিষ্ঠুর নয়, শেষ পাতে দোই মিষ্টি ঠিকি দেবেন।
আমি বলেছিলাম- লাথি খেতে খেতে যে খাবার আমি খাই তা হয় কেঁড়ে নেওয়া নাহয় করুণার। লাথির পরে বালের দোই মিষ্টি আমার দরকার নেই।
জীবনে ঐ প্রথম ও শেষ বারের মত এমন একটি শব্দ আমি বাবার সামনে উচ্চারণ করলাম যা উচ্চারণ করার পরেই আমি বুঝতে পারলাম আমি বাবার সামনে আমার নিজেরও অবাধ্য হয়ে গেছি অনেকখানি। আমি আর থাকতে পারলাম না। বেরিয়ে গেলাম বাড়ি থেকে। রাত তখন প্রায় একটা। হাঁটতে শুরু করলাম। রাস্তা প্রায় মানুষ শূন্য। টুকটাক মানুষ, গাড়ি আর কুকুরের দেখা পাচ্ছি। আমি হাঁটতে থাকলাম।

রেলস্টেশনেও মানুষ প্রায় নেই। যারা আছে তারাও হয় গুটিসুটি মেরে বসে আছে নয় শুয়ে আছে। আমিও বসে পড়লাম চায়ের এক দোকানে। দোকানের লোকটি আমার দিকে একবার দেখল, আমি অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলাম। সেও আর কিছু বলল না। বসে আছি চুপচাপ।

ভোর হয়ে এসেছে, এমন সময় একটা ট্রেন এলো। দুটো টিউশনির বেতন পেয়েছি, পকেটে পর্যাপ্ত টাকা ছিল তাই উঠে পরলাম। ট্রেনটি যখন তার শেষ গন্তব্যে পৌঁছুল তখন সকাল আটটা। স্টেশনে নেমেই বুঝতে পারলাম এ এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী শহর। স্টেশন থেকে বেড়িয়ে আমিও হাঁটতে লাগলাম হাজারো উচ্চাকাঙ্ক্ষীদের ভিড়ে। টানা তিন দিন আমি হেঁটে বেড়ালাম শহরটিতে। ক্ষুধা পেলে হোটেল আর ঘুম পেলে গেস্ট হাউজে চলে যেতাম। এই তিনটা দিন আমি কিছুই প্রায় দেখিনি। শুধু ভেবেছি – আমি ঠিক কি চাই যার জন্যে নিজের অবাধ্য হতেও দ্বিধা করি না। আমার কি কিছুই পাওয়ার নেই। আমি যা চাই তা কি অন্যায্য। আমার অধিকারের গণ্ডী কতটুকু। আমি কোন উত্তর তখন খুঁজে পাইনি। তবে এটুকু বুঝেছিলাম, পালিয়ে যাওয়া কোন সমাধান নয়। তাই স্টেশনে গেলাম।

রাত প্রায় একটা। আমি ফিরে এলাম আমার চেনা সেই ছোট্ট শহরে। ফিরছিলাম বাড়ির পথে। বাড়ির কাছাকাছি এসে কেমন একটা অস্বস্তি হতে লাগলো। ঢুকলাম বাড়িতে।
শুনলাম, তিন দিন আগের সে রাতেই বাবা স্ট্রোক করেন। মারাগেছেন আজ সকালে। বাবা নেই।
একটা প্রচণ্ড চাপ বুকের মধ্যে নিয়ে ঘরে ঢুকলাম। আমার ভাইটা চুপচাপ বসে আছে এককোণে। মা’র চোখে চোখ পড়ল। আমি বুঝতে পারলাম আমার প্রতি মা’র যে ভালবাসা ছিল তার অনেকখানিই এখন ঘৃণার চাঁদরে ঢেকে গেছে। দরজায় ধরে আমি দাঁড়িয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। তারপর ধীরে ধীরে বেড়িয়ে এলাম বাইরে। ঘরের সবাই দেখল কিন্তু কিছু বলল না।

ভাবছি এবার সত্যিই চলে যাবো। আর কেন ঘরে ফেরা…

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন