লেখক খুন

ভোর হতে না হতেই ইন্সপেক্টরের ফোন। তার পরেই চলে এলাম এখানে। একজন লেখকের বাড়ি। খুব বড় লেখক নন। মোটামুটি ধরণের। এলোমেলো জীবনযাপন করতেন। বয়স ত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশের মধ্যে। কাল রাতে খুন হয়েছেন। সকালে পত্রিকাঅলা পত্রিকা দিতে এসে দেখে দরজা খোলা, ভেতরে লাইট জ্বলছে, জানালা খোলা হয়নি। এমনটা কখনো দেখা যায়নি এবাড়িতে। তাই কৌতূহলবশত ভেতরে ঢোকে। তখনই দেখতে পায় লেখকের লাশ, পুলিশে খবর দেয়। তাকে অবশ্য ইন্সপেক্টর এখন বারান্দায় বসিয়ে রেখেছে।

এলাকাটা নিরিবিলি। উঁচু উঁচু বিল্ডিং এখানে কম। একতলা পাকা বাড়িটার চারদিকে দেয়াল। ভেতরে যাই ঘটুক বাইরে থেকে বোঝা সম্ভব নয়। গেইটটা অবশ্য বাইরে থেকে খোলা যায় তবে ওটা দেখে মনে হচ্ছে খোলাই থেকে সবসময়।

পঞ্চাশ-ষাট বছরের পুরনো বাড়ি। দুটো বেডরুম, একটা অব্যবহৃত, একটা ড্রয়িং প্লাস ডাইনিং রুম, তার লাগোয়া কিচেন ও বাথরুম। দেখে বোঝা যায় এক-দুবার সংস্কার করে বর্তমান চেহারায় আনা হয়েছে। বাড়ির সামনে একটু যায়গাও আছে, আগাছা পূর্ণ।

লেখকের লাশটা বেডরুমেই উপুড় হয়ে পড়েছিল। ছুরি দিয়ে করা হয়েছে খুনটা। ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। এখনো মেঝের অনেকটা রক্ত পড়ে আছে, জমাট রক্ত।

ভাবছি খুনের মোটিভটা কি কি হতে পারে। হঠাৎ ইন্সপেক্টরের ডাকে ভাবনাটা ছুটে গেল - 'আলি ভাই।'
'বলুন।'
'লেখকের এক বন্ধু এসেছে। বাসা কাছেই। কথা বলবেন?'
'অবশ্যই, ডাকুন।'

ইন্সপেক্টরকে দেখে আমি মাঝে মাঝেই ভাবি এদেশের কেতাবি জ্ঞান দিয়ে আর যাই হোক অপরাধী বের করতে শেখা যায় না। হাঁদাগুলোর আবার ড্যাং ড্যাং করে প্রোমোশনও হয়!

কাঁদো কাঁদো চেহারার যাকে ইন্সপেক্টর নিয়ে এলো তাকে দেখে খুব সাধারনই বলা যায়, মাঝারি হাইট, মাঝারি স্বাস্থ্য; পরনে ফুলহাতা শার্ট, কাল প্যান্ট, পায়ে স্যান্ডেল। ইন্সপেক্টর আমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন।
'ইনি প্রাইভেট ডিটেকটিভ আলি বেগ আর আলি ভাই ইনি লেখক সাহেবের বন্ধু ইমতিয়াজ আহমেদ, আপনারা কথা বলুন আমি ওদিকটা দেখে আসছি।'
মাথা নেড়ে ইন্সপেক্টরকে সায় দিলাম।
'আমি ভাবতেও পারিনি ওর বুকে কেউ ছুরি চালাতে পারে, ওকে খুন করতে পারে।' কাঁদতে কাঁদতে বললেন ইমতিয়াজ আহমেদ।
'খুনটা করলেন কেন?'
'জি?' অবাক হয়ে তাকাল আমার দিকে।
'সহজ হিসেব, খুনটা আপনি না করলে যানবেন কি করে যে ছুরি দিয়ে করা হয়েছে আর ছুরিটা বুকে মেরেছে না পেটে। পুলিশ তো কাওকে যানায়নি।'

Comments

Popular posts from this blog

সরস্বতী কথন

সাগরে আলাপ

কে