জীবনের মূল্য

মানুষের জীবনে ঘুম এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যায়গা জুড়ে রয়েছে। ডাক্তাররা বলেন অন্তত আট ঘণ্টা ঘুমানো উচিৎ। মানে দিনের তিন ভাগের এক ভাগ। অর্থাৎ এই নিয়ম অনুসরণ করলে আপনি জীবনের একতৃতীয়াংশই ঘুমিয়েই কাটিয়ে দিবেন। কোন মানে হয়? আমার অন্তত এই নিয়ম একেবারেই অপছন্দ। যদিও সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তী ব্যাপারটাকে দেখেছিলেন অন্য ভাবে। একবার এক পত্রিকার সাংবাদিক তার সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় জিজ্ঞেস করল – আপনি সাধারনত কখন ঘুমাতে যান? উত্তরে শিবরাম বাবু বললেন – যখন ঘুম পায়। আর কখন ঘুম থেকে ওঠেন? শিবরাম বাবু বললেন – যখন ঘুম ভাঙে।

ঘুমের কথা বলতে বলতে একটা কৌতুক মনে পড়ে গেলো। এক শিক্ষক ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলেন – ঘুম পেলে আমারা বিছানায় যাই কেন? ছাত্র উত্তর দিল – বিছানা আমাদের কাছে আসে না তাই।

কম ঘুমিয়ে শরীর খারাপ করার পক্ষপাতী আমি নোই। তবে জীবন অমূল্য। শুধু ঘুমিয়ে এর একটা বড় অংশ শেষ করে দিতে আমার বড় আফসোস হয়। জীবনের মূল্য নিয়ে একটা ঘটনা বলি শুনুন – প্রায় পাঁচশ বছর আগেকার কথা। বর্তমান পাকিস্তানে পাঞ্জাব নামের যে প্রদেশটি রয়েছে সেখানে থাকতেন গুরু নানাক শাহ্‌। যিনি শিখ ধর্ম প্রবর্তন করেন। তার কাছে এক লোক গিয়ে বলল – বাবাজী জীবনের মূল্য কি আমাকে বোঝান? বাবাজী কোন উত্তর দিলেন না তবে লোকটিকে একটি চকচকে পাথর দিয়ে বললেন – বাজারে যাও, এই পাথরের কত দাম হয় জেনে আস কিন্তু বিক্রি করো না। লোকটি চলে গেল বাজারে।

বাজারে ঢুকেই সে দেখতে পেল এক লোক আলু বিক্রি করছে। সে তার কাছে গেল। বলল – ভাই এই পাথরটার কত দাম হবে তুমি বলতে পার? দোকানদার পাথরটা ভালো মত দেখে বলল – হুম, বেশ চকচকে। এটা আমাকে দিয়ে যাও বিনিময়ে এক সের আলু নিয়ে যাও। লোকটি বলল – না ভাই বাবাজী বলেছে শুধু দাম জানতে, বিক্রি করা যাবে না।

আলুর দেকান পেছনে রেখে কিছুদূর এগোতেই দেখা মিলল এক ফলের দোকানের। সেই দোকানের মালিককে পাথরটি দেখাতে সে বলল – এই পাথরের বিনিময়ে আমি তোমাকে ভালো কিছু ফল দিতে পারি। লোকটি রাজি হলো না কারন বিক্রির অনুমতি নেই।

এরপর তার দেখা হলো এক স্বর্ণকারের সাথে। সে লোকটিকে বলল – বাঃ এতো বেশ দামি পাথর এটা তুমি আমায় দিলে আমি তোমাকে হাজার মুদ্রা দিতে পারি। লোকটি তাকেও না দিয়ে আরও সামনে এগিয়ে গেল।

এবার দেখা মিলল এক জহুরীর। পাথরটি দেখে সে বিস্মিত হয়ে লোকটির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল – এই পাথর তুমি কথায় পেলে? লোকটি বলল – আমি যেখানেই পাই, এক কত দাম হবে তাই বলুন। আরে পাগল, এর দাম আমি কেন কোন জহুরীর পক্ষেই দেওয়া সম্ভব না; এটা অমুল্য – জহুরী বলল। এই শুনে লোকটি ছুটতে লাগলো নানাকজীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

ছুটতে ছুটতে লোকটি গুরু নানাকের কাছে এসে বলল – বাবাজী কি এই পাথর? কেন এর এত বৈচিত্র্যময় মূল্য? আমার জীবনের সাথে এর কিই বা সম্পর্ক?

গুরু নানাক মুচকি হেসে উত্তর দিলেন – মানুষের জীবনও এই পাথরের মত। সে চাইলে একে এক সের আলুর দামে বেচতে পারে অথবা কিছু ফলের দামে কিংবা হাজার মুদ্রায়। কিন্তু যদি সে চায় তবে জীবনকে অমূল্যও বানাতে পারে। ব্যক্তির জীবনের মূল্য নির্ভর করে তার দৃষ্টিভঙ্গির উপর।

Comments

Popular posts from this blog

সরস্বতী কথন

সাগরে আলাপ

কে