আঙুর ফল টক

অনেক দিন পরে সুবর্ণার সাথে দেখা। একটা বিয়ের অনুষ্ঠানে। সাথে ওর স্বামী আর চার-পাঁচ বছরের একটা বাচ্চা। মোটামুটি আগের মতই দেখতে এখনো। তবে শরীরটা কিছুটা ভারি হয়ে গেছে। খেয়াল করলাম হাঁটার সময় কেমন হাঁসের মত হেলেদুলে হাঁটছে। দেখতে খারাপ লাগছে না ব্যপারটা। কিন্তু ওর হাঁটা দেখলেই বারবার ‘দোল দোল দুলুনি’ গানটা মনে পড়ছে।
ওই প্রথম আমাকে দেখে ডাকল – ‘সুমন, এই সুমন’।
খালি পকেটে রাস্তায় বেরিয়ে দুশো টাকা কুড়িয়ে পেলে যেমন অদ্ভুত আনন্দ হয় ওকে দেখার পর আমারও সেরকম আনন্দ হল। ‘আরে তুমি এখানে’? চোখ-মুখে বিস্ময় নিয়েই জিজ্ঞেস করলাম।
‘হু, কতদিন পরে দেখা তাই না’?
‘হ্যাঁ’…
অনেকক্ষণ চলল আমাদের কথা। আমাকে ওর স্বামীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল আর বাচ্চাটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল মামা বলে। ভাবা যায়! অথচ এই সুবর্ণাকেই আমি একদিন কত চাইতাম মনে মনে।
ওর বাচ্চাটি বেশ চঞ্চল প্রকৃতির। এক যায়গায় স্থির থাকতেই রাজি নয়। তাই ওর স্বামী হাঁটার জন্য বাচ্চাটিকে নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে গেল। আমরা দুজনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম। সুবর্ণার চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকাতে আমি ভাবলাম এবার আমার যাওয়া উচিৎ। কিন্তু হঠাৎ ওই নিরবতা ভাংল – ‘মনে আছে ভার্সিটিতে তুমি আমার কাছ থেকে বই ধাঁর নিয়ে পড়তে’?
‘বই না নোট। তুমি অযথাই বইগুলো দিয়ে পড়তে বলতে।’
‘তুমি কোনদিন পড়নি বইগুলো, তাইনা?’
‘স্বাভাবিক’, আমি বিষয়টা বুঝানোর চেষ্টা করলাম। ‘নোট পড়লেই যেখানে ল্যাঠা চুকে যাচ্ছে বই পড়তে যাব কেন?’
‘না পড়ে যদি একবার খুলেও দেখতে বইগুলো তবে আমি হয়তো এই অনুষ্ঠানে তোমার সাথেই আসতাম’।
এরপর আমি আর বলার মত কোন কথা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তেমন সুযোগও হয়নি অবশ্য। ওর স্বামী বাচ্চাটাকে নিয়ে চলে এসেছিল। তাই ফর্মালি বিদায় নিয়ে নিলাম। আসতে আসতে নিজেকে সান্তনা দিচ্ছিলাম এই বলে যে – ‘বরাবরই আমার সাহসি মেয়ে পছন্দ, যে মেয়ে সাহস করে ভালোবাসার কথা বলতে পারে না তাকে বিয়ে না করে ভালোই হয়েছে; ও আসলে একটা কানারী (কাপুরুষের বিপরীত লিঙ্গ)’।
এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ বউয়ের ফোন – ‘তুমি বিয়ে খেতে গেছ না করতে গেছ, আমি হাসপাতালে প্রেগন্যান্ট হয়ে পরে আছি আর সে রাসলীলা শুরু করেছে; আয় শুধু তুই একবার’।

Comments

Popular posts from this blog

সরস্বতী কথন

সাগরে আলাপ

কে